সমুদ্রে জীবন -৩

আমি আসলে কখনোই ভাবি নি যে, সমুদ্রের জীবন নিয়ে এভাবে সিরিজ লিখবো। কিন্তু এখন লেখার জন্য কেমন যেন একটা চাপের মাঝে রয়েছি বলে মনে হচ্ছে। একজন তো বলেই ফেলেছেন “সমুদ্রে জীবন -৩ কই”? “সামু”-তে যেমন অনেকেই আগ্রহ দেখিয়েছেন তেমনি ঘনভাবে নাস্তিক infested “আমার ব্লগের” অনেকেই বেশ আগ্রহ দেখিয়েছেন সমুদ্র সংক্রান্ত লেখাগুলোতে। এখানকার “big brass”-রা যদি বা এই সিরিজের লেখা পড়েও থাকেন, তবু মতামতে খুব একটা অংশগ্রহণ করেন নি। কিন্তু আমি বেশ অবাক হয়েছি যে “আমার ব্লগের” বেশ সিনিয়র ব্লগাররা, মতামতেও অংশগ্রহণ করেছেন! আজও জাহজের যে সব ব্যাপার সাধারণের কাছে খুব একটা পরিষ্কার নয় – সেসব নিয়ে আমরা একটু কথা বলবো।

প্রথমত, আমরা এখানে কেবল বাণিজ্যক জাহাজ নিয়ে কথা বলবো – যুদ্ধ জাহাজের কথা এখানে টেনে আনবো না! জাহাজের প্রকারভেদ নিয়ে একটু কথা বলি। জাহাজের নানারকম শ্রেণীবিভাগ রয়েছে – তবে প‌্যাসেঞ্জার জাহাজ বা cruise-এর জাহাজগুলো বাদ দিলে, প্রাথমিকভাবে জাহাজগুলোকে দুইভাগে ভাগ করা যায়: কার্গো জাহাজ আর (তেল বা তেল জাতীয় পদার্থ বহনকারী) ট্যাঙ্কার। প্রত্যেকটির আবার অনেক ধরন রয়েছে। আমি জীবনে মাত্র একটি ট্যাঙ্কার-এ sail করেছি এবং নিজেকে শেষ পর্যন্ত অ-ট্যাঙ্কার জাহাজেই স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছি (এটা যার যার টেস্টের ব্যাপার)। কার্গো জাহাজগুলোর মাঝে আবার অনেক জাতের জাহাজ রয়েছে, যেমন: জেনারেল কার্গো, বাল্ক ক্যারিয়ার, কন্টেইনার ক্যারিয়ার ইত্যাদি আর এছাড়া কিছু বিশেষ শ্রেণীর জাহাজ আছে যেমন কার ক্যারিয়ার তথা Ro Ro Vessels, লগ (কাঠ) ক্যারিয়ার, বানানা (কলা) ক্যারিয়ার, ক্যাটেল (গরু-ছাগল) ক্যারিয়ার, রেফ্রিজারেটেড কার্গো শিপ (এই ধরনের জাহাজগুলো, যেমন ধরুন আর্জেন্টিনা/ব্রাজিল থেকে সৌদী আরবের মত দেশে নিয়মিত refrigerated ও processed meat বহন করে থাকে) ইত্যাদি। আমরা এর মাঝে ৩ প্রকার জাহাজ নিয়ে একটু বিস্তারিত আলোচনা করবো:
ক)জেনারেল কার্গো: কন্টেইনার ট্রেডের ব্যাপক প্রসারের আগে, মালামাল বহন করার জন্য এই শ্রেণীর জাহাজই আদতে সবচেয়ে বেশী ব্যবহৃত হতো। পাট, কাপড়, মেশিনপত্র, প‌্যাকেট, টিন বা বোতলজাত খাবার/পানীয় থেকে শুরু করে মালামাল বলতে যা বোঝা যায় – সব এগুলো দিয়েই বহন করা হতো। বাংলাদেশ, পাকিস্তান বা ভারতের জাহাজগুলো অল্প কিছুদিন আগে পর্যন্তও মূলত এই শ্রেণীর জাহাজই ছিল।
খ) কন্টেইনার জাহাজ: এই ব্যবস্থায় মালামাল বহন করাটার ব্যাপক প্রসার ঘটেছে গত ১৫/২০ বছর সময়ে এবং এই জাহাজগুলোই মূলত নতুন জেনারেশনের মাল বহনকারী জাহাজ। আমাদের দেশে যেভাবে “কাভার্ড ভ্যানগুলো” সনাতন ট্রাককে বাজার থেকে একরকম তাড়িয়ে দিতে বসেছে, আন্তর্জাতিক মালামাল বহনের বেলায় কন্টেইনার জাহাজও তেমন জেনারেল কার্গো জাহাজকে বাজার থেকে বলতে গেলে তাড়িয়েই দিয়েছে। জেনারেল কার্গো জাহাজগুলো এখন সাধারণত স্বল্প দুরত্বে অধিকতর সস্তা মালামাল বহনে ব্যবহৃত হয়।
গ)বাল্ক ক্যারিয়ার: এগুলো গম, কয়লা, আয়রন ওর, রক ফসফেট, ইউরিয়া, এ্যলুমিনা ইত্যাদি bulk cargo বহন করতে ব্যবহৃত হয়।

আমি উপরোক্ত তিন শ্রেণীর জাহাজ ছাড়াও ১টি ট্যাঙ্কার, ২ টি লগ (কাঠ) ক্যারিয়ার এবং ১টি Ro Ro Vessel-এ কাজ করেছি।

এর আগে “সমুদ্রে জীবন” বলে যে ২টি পোস্ট দিয়েছি সেগুলোতে যে জাহজটির ছবি দেয়া আছে – আজ সেই “কন্টেইনার জাহাজ”টির আরো দুইটি ছবি দিচ্ছি। আপনাদের অবগতির জন্য; জাহজটি প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কন্টেইনার বহন কারী ৬৬, ২০০ ব্রেক হর্স-পাওয়র ইঞ্জিন বিশিষ্ট – সমুদ্রে একদিনে যার জ্বালানী লাগে প্রায় ১৮৫ টন (রাফ হিসবে যা ১৮৯০০০লিটার)।

1  [একপাশ থেকে তোলা জাহাজটির Navigational Bridge-এর ছবি]

2[দক্ষিণ কোরিয়ার পুসান বন্দরে মালামাল ওঠা নামা হচ্ছে জাহাজটিতে]

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *