সমুদ্রে জীবন – ২
সমুদ্রে জীবন নিয়ে সাধারণের অনেক প্রশ্ন ও ভুল ধারণা রয়েছে। কেউ কেউ আমাকে জিজ্ঞেস করেছেন, “জাহাজ কি রাতে গভীর সমুদ্রে নোঙর করে থাকে? তারপর আবার সকাল হলে যাত্রা শুরু করে??” – যারা সমুদ্রের জীবন সম্বন্ধে সামান্য জ্ঞান রাখেন, তারাও জেনে থাকবেন যে, প্রশ্নগুলোর অবস্থান আসলে বাস্তবতা থেকে কত দূরে!
প্রথমত, গভীর সমুদ্রে “নোঙর” করা যায় না – কারণ নোঙর করতে হলে, নোঙর বা anchor-কে সমূদ্রের তলদেশের মাটি বা ভূমি স্পর্শ করতে হবে – গভীর সমুদ্রে সাধারণত তার কোন সম্ভাবনাই নেই। দ্বিতীয়ত, জাহাজ একবার চলতে শুরু করলে একটানা রাতদিন চলতে থাকে, যতক্ষণ না গন্তব্যে পৌঁছায়। আমার অভিজ্ঞতায় বড় কন্টেইনার জাহাজগুলোতে আমি একটানা ১৬ দিন চলেছি Tokyo থেকে Balboa (Panama) আর Bulk Carrier- এ একটানা চলেছি ৪৫ দিন – Bangkok থেকে Cape ঘুরে Lagos।
আমার মা তো প্রথম প্রথম ঢাকার আকশ মেঘলা হলে বা চট্রগ্রাম-কক্সবাজারে বিপদ সংকেত দেখাতে বললে, আমার জন্য ভয়ে-দুশ্চিন্তায় অস্থির হয়ে উঠতেন। আরো যে প্রশ্নগুলো বাইরের লোকেরা কেউ কেউ জিজ্ঞেস করে থাকেন, তার ভিতর একটা হচ্ছে “রাতে কি জাহাজ শক্তিশালী ‘সার্চ-লাইট’ জ্বালিয়ে চলে?” এরও উত্তর negative । লাল, সবুজ ও স্বাভাবিক আলোর ৫ থেকে ৭ টি ছোট ছোট “নেভিগেশন” ও “সংকেত” লাইট ছাড়া, জাহাজের বাইরেটা যথাসাধ্য অন্ধকার রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করা হয়। এরই অংশ হিসেবে “আবাসিক এলাকা” বা accommodation-এর সামনের দিকের জানালাগুলোতে, রাতে কালো লাইনিংওয়ালা ভারী পর্দা টেনে দেয়া হয়! যে “নেভিগেশন” ও “সংকেত” লাইটগুলো জ্বালানো হয় – সেগুলোর উদ্দেশ্যও কিছু দেখা নয় – বরং অন্যে যাতে “আমাকে দেখতে ও বুঝতে পারে” তা নিশ্চিত করা! অনেকটা রিক্সার নীচে যে হারিকেন জ্বালানোর কথা (অথচ, আজকাল প্রায় কেউই যা জ্বালায় না) – তার মত ব্যাপার। কিন্তু জাহাজের নিজের নাবিকদের জন্য, বাইরেটা যত অন্ধকার তত দেখতে সুবিধা – অন্ধকারের ভিতর অপর কোন নৌযানের “নেভিগেশন” ও “সংকেত” লাইট অনেক দূর থেকেই সহজে ধরা পড়ে। আজ এখানেই থাক …. আগে যে জাহাজের ঘরের ছবি দিয়েছিলাম, আজ আপনাদের জন্য সেটারই বাইরের দু’টো ছবি দিলাম:
[এর আগের লেখাটা রয়েছে এখানে: https://marinerbd.wordpress.com/সমুদ্রে-জীবন/]