ফযরের সালাত দিনের বেলায় কাযা করতে হলে কির’আত জোরে আদায় করবেন নাকি আস্তে?
প্রশ্নঃ যদি কোনো কারণে ফযরের সালাত দিনের বেলায় কাযা করতে হয় তাহলে কি তিনি কির’আত জোরে আদায় করবেন নাকি আস্তে? তেমনিভাবে যদি আসরের সলাত কোনো কারণে মাগরিবের পরে অথবা রাতে আদায় করতে হয় তাহলে কি তিনি কির’আত নিরবে পড়বেন নাকি স্বরবে?
উত্তর দিয়েছেন ডঃ মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ
উত্তরঃ এই মাস’আলাটিতে অর্থাৎ কির’আতের ক্ষেত্রে চারটি অবস্থা রয়েছেঃ
১. যেই সলাতটি ব্যক্তি আদায় করবেন সেটা যদি জাহরি হয় (জাহরি বলা হয় যে সলাতে কির’আত স্বশব্দে পড়া হয়ে থাকে আর সেররি হচ্ছে যে সালাতে কির’আত নিরবে পড়া হয়ে থাকে) অর্থাৎ রাতের সলাত এবং সেটা যদি তিনি রাতেই আদায় করে থাকেন তাহলে তিনি সমস্ত উলামায়ে কিরামের ঐক্যমতে কির’আত স্বশব্দে পড়তে পারবেন।
২. যদি সেররি সলাত হয়ে থাকে এবং তিনি দিনের বেলায়ই সলাত আদায় করে থাকেন তাহলে সমস্ত উলামায়ে কিরামের ঐক্যমতে তিনি কির’আত নিরবে পড়তে পারবেন।
৩. জাহরি সলাত যদি কেউ দিনের বেলায় আদায় করে থাকেন যখন কির’আত আস্তে পড়া হয়ে থাকে।
৪. সেররি সলাত যদি তিনি রাতের বেলায় আদায় করে থাকেন যে সময় কির’আত জোরে আদায় করে হয়ে থাকে।
৩ এবং ৪ নম্বর মাস’আলার ক্ষেত্রে ‘আলেমদের দ্বিমত রয়েছে। ইমাম নববী (রহ.) বলেন, একদল উলামায়ে কিরাম বলেছেন এক্ষেত্রে ধর্তব্য হচ্ছে যে ওয়াক্তুল কাযা বা যে সময় তিনি কাযা আদায় করছেন সে সময় ধর্তব্য হবে অর্থাৎ যদি তিনি রাতে আদায় করে থাকেন তাহলে তিনি আওয়াজ করে তিলাওয়াত করবেন আর যদি তিনি দিনে আদায় করে থাকেন তাহলে তিনি নিরবে বা আস্তে তিলাওয়াত করবেন।
আরেকদল উলামায়ে কিরামের অভিমত হচ্ছে এখানে ধর্তব্য হচ্ছে ওয়াক্তুল ফাওয়াত অর্থাৎ যে সময়টা তার চলে গিয়েছে বা গত হয়েছে সেটার মতোই আদায় করবেন। অর্থাৎ যেই সলাতে যেভাবে কির’আত পড়া স্বাভাবিক নিয়ম সেভাবেই আদায় করবেন।
এখানে বিশুদ্ধ বক্তব্য হচ্ছে ওয়াক্তুল ফাওয়াত ধরে আদায় করা অর্থাৎ যদি রাতের সলাত বা জাহরি কির’আতের সালাত হয়ে থাকে তবে সেটাকে তিনি দিবসে আদায় করে থাকেন তাহলে তিনি সেটাকে জোরে বা স্বরবে আদায় করতে পারবেন। নুরুন আলাদ দরব অর্থাৎ সৌদি ‘আরাবের সর্বোচ্চ উলামা পরিষদের ফাতওয়ার যে চ্যানেলটি রয়েছে সেখানে শাইখ আব্দুল আযীয আব্দুল্লাহ্ বিন বায (রহ.) এ বক্তব্যকে প্রাধান্য দিয়েছেন এবং শাইখ মুহাম্মাদ সালেহ আল উসাইমীন (রহ.) ও এই বক্তব্যকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। মূলত এ মর্মে সহিহ মুসলিমে ৬৮১ নম্বরে হাদিসে বলেন,
فأذن بلال فصلى رسول الله صلى الله عليه وسلم ركعتين ثم صلى الفجر فصنع كما صنع كل يوم
আবু কতাদাহ (রহ.) বলেন এরপর বিলাল (রা.) সলাতের আযান দিলেন এবং পরে রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের দুই রাকাত সলাত আদায় করলেন। প্রতিদিন যেভাবে রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সলাত আদায় করেন ঠিক সেভাবেই সলাত আদায় করলেন।
এখান থেকে ইমাম নববী (রহ.) সহিহ্ মুসলিমের ব্যাখ্যার মধ্যে বলেন, দিনের বেলায় রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ফজরের সলাতকে কাযা করেছেন তখন ঠিক সেভাবেই আদায় করেছেন যেভাবে রাতের বেলায় আদায় করেন।
এখান থেকে বুঝা যায় কেউ যদি রাতের সালাত দিবসে আদায় করেন তাহলে তিনি স্বরবে সলাত আদায় করতে পারবেন। এটিই বিশুদ্ধ বক্তব্য। ওয়াল্লাহু আ’লাম।