السلام عليكم ورحمة الله و بركاته

الحمد لله والصلاة والسلام على رسول الله وبعد

প্রশ্নঃ শেয়ার ও এমএলএম (মালটিলেভেল মার্কেটিং) বিজনেস সম্পর্কে জানতে চাই?

উত্তর দিয়েছেন ডঃ মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ

উত্তরঃ এ বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য অনেকগুলো বই রয়েছে; অনেক দীর্ঘ আলোচনা রয়েছে। এই সংক্ষিপ্ত আলোচনার মধ্যে এত দীর্ঘ আলোচনা করার সুযোগ নেই। প্রথমত, শেয়ার ব্যবসা ইসলামী শরিয়তের মধ্যে কমনলি হারাম নয়। যদি কেউ কোনো কোম্পানির শেয়ার খরিদ করেন মালিকানা লাভের জন্য তাহলে সেটি জায়েয হবে। এর জন্য শর্ত হচ্ছে, সেখানে সুদের কোনো লেনদেন থাকতে পারবে না এবং ব্যবসার মধ্যে হারাম কিছু থাকতে পারবে না অর্থাৎ হারাম ব্যবসা হওয়া যাবে না।

দ্বিতীয়ত, মার্কেটের প্রচলিত যে শেয়ার রয়েছে সে শেয়ার ক্রয় করা বা বিক্রয় করা সেটিও ইসলামী শরিয়তে একটি পর্যায়ে জায়েয রয়েছে। এর জন্য কিছু শর্ত রয়েছেঃ

১. শেয়ারের Against এ অবশ্যই কোম্পানির সুনির্দিষ্ট এসেট (asset) থাকতে হবে। শেয়ার যদি শুধুমাত্র মানি বা কারেন্সির (currency) হয়ে থাকে তাহলে এর মাধ্যমে অতিরিক্ত লেনদেন করাটি সুদে পরিণত হবে এবং হারাম হবে।

২. কোম্পানির লেনদেনের মধ্যে সুদের সরাসরি কোনো সম্পর্ক থাকতে পারবে না।

৩. যে বস্তুর শেয়ার কোম্পানি মার্কেটে দিবে সেটা অবশ্যই হালাল হতে হবে। যদি হালাল না হয় তাহলে কোনোভাবেই এই শেয়ারের লেনদেন বৈধ হবে না।

৪. শেয়ারের যারা মালিক হবেন তাদেরকে অবশ্যই কোম্পানির শেয়ার হোল্ডারদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। যদি শুধুমাত্র কাগজি শেয়ার হয়ে থাকে তাহলে সেটি বৈধ হবে না।

যদি শেয়ারের এই দৃষ্টিভঙ্গিগুলো আমরা সামনে রাখি তাহলে আমাদের কাছে স্পষ্ট হবে যে, শেয়ার মার্কেটিং বা শেয়ারের ব্যবসা একটি সুনির্দিষ্ট পরিসরে জায়েয রয়েছে। সেক্ষেত্রে জুয়া থেকে শেয়ারের এই মার্কেটকে পরিপূর্ণরুপে মুক্ত রাখতে হবে। কিন্তু আমরা দেখতে পাই যেক্ষেত্রে এটাকে উলামায়ে কেরাম জায়েয মনে করেছেন সেক্ষেত্র ছাড়া শুধুমাত্র কাগজের লেনদেন অথবা শুধুমাত্র অর্থের লেনদেন অথবা জুয়াবাজির মাধ্যমে শেয়ার মার্কেটিং করা অথবা শেয়ারের দাম বৃদ্ধি করা সম্পূর্ণ হারাম। এক্ষেত্রে গেমলিং অথবা জুয়ার বিষয় যদি এসে যায় তাহলে এ ধরনের শেয়ারের লেনদেন ইসলামী শরিয়তের মধ্যে সম্পূর্ণরূপে হারাম। কারণ এগুলোর মধ্যে সুদ থেকে যাবে। কোনোভাবেই সুদমুক্ত করার সুযোগ থাকবে না। যেহেতু আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেছেন, احل الله البيع وحرم الربا “আল্লাহ্‌ তা’আলা ব্যবসাকে হালাল করেছেন আর সুদকে হারাম করেছেন।” সুতরাং সুদের এই লেনদেন কোনোভাবেই জায়েয হবে না। তেমনিভাবে ইসলামী শরিয়তে জুয়াকেও হারাম করা হয়েছে। তাই শেয়ার লেনদেনের ক্ষেত্রে আমাদের অধিক সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। আমরা দেখি যে মূলত বেশিরভাগ কোম্পানিই তাদের কোনো ধরনের এসেট বা কোম্পানির কোনো ধরনের সম্পদ অথবা পণ্য অথবা ব্যবসা নেই। কোম্পানি শুধুমাত্র কোম্পানির নামেই শেয়ার মার্কেটিং শুরু করে থাকে কিছু লিকুইড মানির মাধ্যমে এবং এই শেয়ার মার্কেটিং এর মাধ্যমে মূলত জুয়াবাজি করে কোম্পানি তাদের শেয়ারের দাম বৃদ্ধি করে থাকে। সেক্ষেত্রে জুয়ার প্রভাবই বেশি থেকে যায়। যদি এমনটি হয়ে থাকে তাহলে এ ধরনের শেয়ারের ব্যবসা ইসলামী শরিয়তের মধ্যে সম্পূর্ণ হারাম, যেহেতু এটি জুয়াবাজি ছাড়া আর কিছুই নয়। এ ধরনের জুয়াবাজি ইসলামী শরিয়তে জায়েয নেই।

এমএলএম ব্যবসাঃ এটিও দীর্ঘ একটি আলোচ্য বিষয় যার উপর ইতিমধ্যে অনেক বই লিখা হয়েছে, অনেক প্রবন্ধ লিখা হয়েছে। সৌদি ‘আরবের সর্বোচ্চ উলামা পরিষদ এবং সৌদি ‘আরবের আল লাজনা আল দায়েমা লিল ইফতা; অর্থাৎ ফাতওয়ার স্থায়ী কমিটির বক্তব্য হচ্ছে তারাএই ব্যবসাকে সম্পূর্ণ হারাম বলেছেন।মূলত এই ব্যবসা হারাম হওয়ার অনেকগুলো কারণ রয়েছে। কারণগুলো যদি আমরা পর্যালোচনা করি তাহলে আমাদের কাছে বিষয়টি আরো স্পষ্ট হবে। প্রকৃতপক্ষে এমএলএম ব্যবসা বা মাল্টিলেভেল মার্কেটিং এর ব্যবসাটি হচ্ছে জুয়া এবং সুদের একটি নতুন এডিশন বা সংস্করণ। অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে এতে একটি পণ্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে যেই পণ্যটি হচ্ছে মূলত একটি পর্দা বা আড়াল অথবা একটি উপায়। এই পণ্যকে আড়াল করে মূলত এখানে জুয়াবাজি এবং সুদের একটি লেনদেন করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এখানে বেচাকেনার একটা সুরত দেখানোর জন্য পণ্যটি ব্যবহার করা হচ্ছে যেটি একেবারে নামকাওয়াস্তে বা নমিনালভাবে। কিন্তু এখানে পণ্য নেই বা এখানে পণ্যের মালিকানাও সাব্যস্ত হয় না। আর পণ্য ক্রয়ের বিষয়টিও মূলত এখানে উদ্দেশ্য ও উল্লেখযোগ্য নয়। ক্রয়ের চেয়ে মূলত এখানে অর্থই হচ্ছে উদ্দেশ্য। আর যারা এখানে অংশগ্রহণ করে থাকেন তাদের উদ্দেশ্যই হয়ে থাকে এখান থেকে কমিশন বা সুদ বা অতিরিক্ত টাকা গ্রহণ করা। তাই এখানে মৌলিক পাঁচটি কারণে সৌদি ‘আরবের সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদ এটিকে হারাম বলেছেন। নিম্নে কারণগুলো তুলে ধরা হলঃ

১. এটি সকল প্রকারের সুদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ রিবান ফদ্বল (অতিরিক্ত সুদ) ও রিবাল নাসিয়া (সময়ের কারণে যে সুদ বৃদ্ধি করা হয়ে থাকে) এই দুই প্রকারের সুদই মূলত এর মধ্যে রয়েছে যা সম্পূর্ণ হারাম।

২. এখানে হারাম যে গরর (ঝুঁকি/আশংকা/অনিশ্চয়তা) রয়েছে তার জন্য। আর এ ধরনের গরর ইসলামী শরিয়তের মধ্যে হারাম। সহিহ মুসলিমের হাদিসে রসূলুল্লাহ্ (স.) বলেছেন, نهى رسول الله صلى الله عليه وسلم عن الغرر “নবী ﷺ ধোকা/প্রতারণাকে ও এই ধরনের ঝুঁকিকে নিষেধ করেছেন।” সেখানে আসলে আদৌ কি তিনি লাভবান হবেন কিনা অথবা আদৌ কি তিনি এই কমিশন বা অতিরিক্ত টাকা পাবেন কিনা সে বিষয়ে সন্দেহ রয়ে গিয়েছে।

৩. এর মাধ্যমে কোম্পানি অন্যায়ভাবে সম্পদ ভক্ষণ করার একটা পথ বের করেছে। আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা সূরা নিসার ২৯ নং আয়াতে বলেছেন, يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَأْكُلُوا أَمْوَالَكُم بَيْنَكُم بِالْبَاطِلِ “হে ঈমানদারগণ তোমরা পরষ্পরের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করো না।” অন্যায়ভাবে আসলে মানুষের মাল গ্রহণ করার একটা সুযোগ এখানে থেকে যায় যেটা মাল্টিলেভেল মার্কেটিং এ একটি প্রমাণিত সত্য। দেখা যায় যে বিভিন্ন কোম্পানি লোকেদের টাকা নিয়ে পালিয়ে গিয়েছে অথবা উধাও হয়ে গিয়েছে। এখন আর কোম্পানির কোনো অস্তিত্ব নেই যার ফলে লোকেরা আফসোস করছে, এমনকি অনেক সাধারণ মানুষ নিঃশ হয়ে গিয়েছে। এক্ষেত্রে আমাদেরকে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

৪. এখানে আল গিশ (ধোকা, প্রতারণা/তাদলীস) রয়ে গিয়েছে। যেখানে রসূলুল্লাহ্ ﷺ সহিহ মুসলিমের হাদিসে বলেছেন, من غشنا فليس منا رواه مسلم “যে আমাদেরকে ধোকা দিলো সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত হতে পারবে না।” কারণ লেনদেনকারী আসলে জানেন না যে তিনি আদৌ কি কোনোভাবে এই কমিশন লাভ করতে পারবেন কিনা। তার যদি সেখানে কোনো পার্টনার বা কাস্টমার না হয়ে থাকে তাহলে সেক্ষেত্রে তিনি বঞ্চিত হয়ে যাবেন অথচ তাকে দেখানো হচ্ছে যে তিনি লক্ষ লক্ষ টাকার মালিক হয়ে যাবেন যদি এখানে অংশগ্রহণ করেন।

৫. এর মাধ্যমে কোম্পানির উদ্দেশ্য হচ্ছে কোম্পানির শরিক বা অংশীদার বৃদ্ধি করা যার অর্থ হচ্ছে টাকার মাধ্যমে লোকদেরকে এই জুয়াবাজিতে উদ্বুদ্ধ করা এবং প্রত্যেকের কাছ থেকে টাকা আদায় করার এটি হচ্ছে পলিসি। তাই কোম্পানি মূলত পণ্যকে আড়াল রেখে এখানে লোকদেরকে এই জুয়াবাজিতে অংশগ্রহণ করার একটা অভিনব পলিসি আবিষ্কার করেছে। ফলে এ কাজটি মূলত জুয়াবাজির একটা অংশে পরিণত হয়েছে এবং যারা অংশগ্রহণ করে থাকেন তাদের জন্য টাকা দেয়াটা বাধ্যতামূলক থাকে। পণ্য ক্রয়ের নাম দিয়ে যেটি করা হয়ে থাকে সেখানে উদ্দেশ্য পণ্য ক্রয় করা নয় বরং উদ্দেশ্য হচ্ছে কমিশন গ্রহণ করার জন্য চেষ্টা করা এবং লোকেরা এ কাজের জন্যই মূলত এখানে অংশগ্রহণ করে থাকেন। এ কারণেই মূলত এমএলএম ব্যবসা পরিপূর্ণরুপে হারাম। এমএলএম ব্যবসাকে যারা হালাল বলেছেন তারা আসলে বিভ্রান্ত এবং পথভ্রষ্ট।

এরপর আমরা দুটি সংশয়ের অপনোদন করতে চাইঃ

১. কেউ কেউ মনে করেন যে এটা একটা দালালীর মতো অথবা কোনোকাজের মধ্যস্থতা করার বিষয়। মূলত বিষয়টি এমন নয়। কেননা এখানে প্রত্যেকটি ব্যক্তিকে অর্থ দিয়ে অংশগ্রহণ করতে হয় যার প্রকৃত রূপ হচ্ছে মূলত জুয়া। দালালী বা মধ্যস্থতাকারী ব্যক্তি কোনোভাবেই অর্থ দিয়ে লেনদেনের মধ্যে অংশগ্রহণ করেন না। যদি অর্থ দিয়ে লেনদেনের মধ্যে অংশগ্রহণ করতে বাধ্য করা হয় তাহলে এটি নিঃসন্দেহে জুয়া হবে যা হারাম।

২. অনেকেই মনে করে থাকেন যে এটা কোম্পানির পক্ষ থেকে একটা দান বা হিবা এর মতো। কোম্পানি যারা এ কাজটি করছে তাদেরকে একটা অতিরিক্ত দান বা তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য এটি দিচ্ছেন। তাদের এ বক্তব্যটিও শুদ্ধ নয়। যেহেতু ঋণের বিনিময়ে ইসলামী শরিয়তে কোনোভাবেই দান গ্রহণ করা জায়েয নেই বরং হারাম। যেহেতু কোম্পানিকে আপনি টাকা দিয়েছেন সেক্ষেত্রে এটা গ্রহণ করা আপনার জন্য হারাম হবে। তাই এটাকে ইসলামী শরিয়তে কোনোভাবেই হালাল করার প্রক্রিয়া নেই। অবশ্যই এ প্রকারের লেনদেন হালাল করার ভিন্ন বৈধ প্রক্রিয়া রয়েছে।

উল্লেখ্য যে এ ধরনের লেনদেন হালাল করার প্রক্রিয়া একটিই হতে পারে যদি কোনো যোগ্য ‘আলেম বা গবেষক অথবা যারা মু’আমালাত এর জ্ঞান রাখেন তাদের মাধ্যমে এ বিষয়টি স্টাডি করা হয় তাহলে লেনদেনের হালাল প্রক্রিয়া বেরিয়ে আসতে পারে। তবে হালাল বা বৈধ করার জন্য লোকাল লিগেল সিস্টেম থাকতে হবে। আমরা মনে করি অবশ্যই এ প্রকার

তবে যেই পদ্ধতিতে বর্তমানে এমএলএম বিজনেস চলছে সেটি সম্পূর্ণরুপে হারাম। তাই এই ব্যবসা বা এই লেনদেন থেকে আমাদের দূরে থাকতে হবে। ইসলামী শরিয়তের মধ্যে অসংখ্য লেনদেন রয়েছে যেগুলো হালাল এবং যেগুলো আমরা স্পষ্টভাবে জানি। সুতরাং কেন আমরা হারাম এবং অস্পষ্ট লেনদেনের মধ্যে যাব? যেখানে রসূলুল্লাহ্ ﷺ হাদিসের মধ্যে বলেছেন, ومن وقع في الشبهات فقد وقع في الحرام “যে ব্যক্তি সন্দেহের মধ্যে পড়লো সে হারামের মধ্যেই পতিত হলো।” সুতরাং হারাম থেকে বিরত হওয়ার জন্য চেষ্টা করুন। আল্লাহ্ আমাদের তৌফিক দান করুন।

والسلام عليكم ورحمة الله و بركاته

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *