প্রশ্নঃ কবরের আযাব থেকে মুক্তি এবং কোনো ধরনের শাস্তি ছাড়াই জান্নাতে যেতে কি করণীয়?
প্রশ্নঃ আমি জান্নাতে যেতে চাই, কবরের আযাব থেকে মুক্তি পেতে চাই, কোনো ধরনের শাস্তি ছাড়াই জান্নাতে যেতে চাই এক্ষেত্রে আমার কি করণীয়?
উত্তর দিয়েছেন ডঃ মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ
উত্তরঃ আসলে জান্নাতে যাওয়ার বিষয়টি কঠিন কোনো বিষয় নয়। কিন্তু আমরা নিজেরাই জান্নাতে যাওয়ার পথকে নিজেদের উপর কঠিন করে নেই। সহিহ মুসলিম ও বাইহাকীর একটি হাদিস আমরা আজকের এই আলোচনায় নিয়ে আসতে চাই সেটি হলো,
عن جابر بن عبد الله رضي الله عنهما أن رجلا سأل رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال : أرأيت إذا صليت المكتوبات ، وصمت رمضان ، وأحللت الحلال ، وحرمت الحرام ، ولم أزد على ذلك شيئا ، أأدخل الجنة ؟ قال : نعم رواه مسلم
এক ব্যক্তি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আসলেন। এসে প্রশ্ন করলেন এ ব্যাপারে আপনার কি বক্তব্য বা আপনি কি মনে করেন যদি আমি পাঁচ ওয়াক্ত সলাত আদায় করি, রমাদান মাসে সিয়াম পালন করি, হালাল সমূহকে যথাযথভাবে মেনে বাস্তবায়ন করি, হারামকে হারাম জেনে হারাম থেকে বিরত থাকি এবং এর চেয়ে আর অতিরিক্ত কিছু না করি আমি কি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবো? রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন হ্যা তুমি জান্নাতে যেতে পারবে।
এ হাদিসটিতে মূলত যে বেদুঈন ব্যক্তি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আসলেন নুমান ইবনে কাওয়াক ইবনে আসরাম আনসারি রাদিয়াল্লাহু তা’আলা ‘আনহু। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে জান্নাতে যাওয়ার সহজ পদ্ধতি জানতে চেয়েছিলেন এবং রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম জান্নাতে যাওয়ার সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি এটি বলেছিলেন। এখানে একটি বিষয় আমাদের জানতে হবে সেটা হলো জান্নাতে যাওয়ার জন্য আসলে আল্লাহ্ রব্বুল ‘আলামীন যেই পথটি দেখিয়েছেন এবং তার রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে পথনির্দেশ করেছেন সেটিই সবচেয়ে সহজ পথ। এক্ষেত্রে যদি আল্লাহর বান্দা ফরয যেই ‘ইবাদাতগুলো রয়েছে সেগুলো যথাযথভাবে আদায় করে থাকেন এবং হালাল ও হারামের যেই পরিসীমা আছে সেটাকে যদি সত্যিকারভাবে মেনে চলেন এবং শিরক ও বিদ’আত মুক্ত সম্পূর্ণভাবে জীবনযাপন করে থাকেন। কোনোভাবেই আল্লাহ্ রব্বুল ‘আলামীনের সাথে শিরকে লিপ্ত না হোন তাহলে তিনি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবেন, কবরের আজাব থেকে মুক্তি লাভ করতে পারবেন এবং আল্লাহ্ রব্বুল ‘আলামীনের কঠিন শাস্তি থেকে মুক্তি লাভ করতে পারবেন যেই কঠিন শাস্তির কথা আল্লাহ্ রব্বুল ‘আলামীন নবীদের মাধ্যমে জানিয়েছেন। জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ্ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত সহিহ মুসলিমের হাদিসে রসূলুল্লাল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এভাবে বলেন,
من مات وهو لا يشرك بالله شيئا دخل الجنة رواه مسلم
“যে ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করলো এ অবস্থায় যে আল্লাহ্ রব্বুল ‘আলামীনের সাথে কাউকে শরীক সাব্যস্ত করলো না সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।”
সুতরাং বন্ধুগণ, জান্নাতে যাওয়ার পথ আসলে অনেক কঠিন না। আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীন তার বান্দাদেরকে সৃষ্টি করেছেন জাহান্নামের আগুনের মধ্যে পোড়ানোর জন্য নয়। বরং তাদের উপর অনুগ্রহ এবং মেহেরবানী করার জন্য সৃষ্টি করেছেন এবং তাদেরকে পুরষ্কৃত করবেন জান্নাতের মাধ্যমে। এক্ষেত্রে যদি আমরা আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীনের আরো নৈকট্য লাভ করতে চাই, জান্নাতের আরো উঁচু মাকাম পেতে চাই তাহলে আমাদেরকে অতিরিক্ত নফল ‘ইবাদাতগুলো পালন করতে হবে যেগুলো রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম করেছেন বা করতে বলেছেন। দেখুন আল্লাহ্ তা’আলা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সকল ত্রুটিবিচ্যুতি ক্ষমা করে দিয়েছেন। আল্লাহ্ তা’আলা জান্নাতের বিষয়টি নবী এবং রাসূলদের কনফার্ম করে দিয়েছেন। এতদ সত্তেও রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে এমনভাবে ‘ইবাদাত করতেন যে তার দুটি পা ফুলে যেত। আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীনের শুকরিয়া আদায়ের জন্যই তিনি এটি করেছেন। তাই আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীনের নৈকট্য লাভ করতে চাইলে ফরজের পাশাপাশি নফল ‘ইবাদাতগুলোও আমাদের বেশি বেশি আদায় করতে হবে। তাহলেই আমরা জান্নাতের দিকে আরো বেশি অগ্রসর হতে পারবো তবে শিরক এবং বিদ’আত থেকে বেঁচে থাকাটা এক্ষেত্রে অপরিহার্য বা বাধ্যতামূলকভাবে বিষয়। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়াতা’আলা আমাদের সবাইকে জান্নাতে যাওয়ার তৌফিক দান করুন। আমীন।
والسلام عليكم ورحمة الله و بركاته