প্রশ্নঃ জুম’আ বার আসর সলাতের পর এই দুরুদ ৮০ বার পাঠ করলে “আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিনিন নাবিয়্যিল উম্মিয়্যি ওয়া ‘আলা আলিহি ওয়াসাল্লিম তাসলিমা” নাকি ৮০ বৎসরের গুনাহ মাফ করে দেয়া হয় ও ৮০ বৎসরের নফল ইবাদতের সওয়াব লিখা হয়?

উত্তর  দিয়েছেন ডঃ মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ

উত্তরঃ প্রথম কথা হচ্ছে হুবহু এই টেক্সটে আল্লাহর রাসূল ﷺ এর কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এই বক্তব্যটি মূলত মুকাম্মাল ওয়াযায়েফ নামে একটি অযীফার বই রয়েছে সেই বইয়ে উল্লেখ করা হয়েছে এবং এটি একেবারেই হাদিসের নামে জালিয়াতি বা মিথ্যা বক্তব্য। সুতরাং, রাসূলুল্লাহ্ ﷺ এই বক্তব্য দেননি। ইবনু শাহীন (রহ.) ফাযায়েলে ‘আমালের মধ্যে একটি হাদিস উল্লেখ করেছেন যে হাদিসটিকে ইমাম সাখাবী (রহ.) আল কওলুল বাদি’ঈতে উল্লেখ করেছেন, জুম’আর দিন কেউ যদি আসরের সলাতের পরে আল্লাহর নবী ﷺ এর উপর ৮০বার দরূদ পাঠ করে থাকে তাহলে আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা তার ৮০ বছরের গুনাহ্ মাফ করে দিবেন। এই মর্মে যে বর্ণনাটি উল্লেখ করা হয়ে থাকে এটিও সনদের দিক থেকে গ্রহণযোগ্য নয়। এটি মুনকার, অত্যন্ত দূর্বল একটি হাদিস এবং অধিকাংশ আহহুল তাহক্বীক মুহাক্কিক ‘উলামায়ে কিরাম এই রেওয়ায়াতটিকে দূর্বল বলেছেন। তবে এই হাদিসের মধ্যেও আপনি যেই দরূদটির কথা উল্লেখ করেছেন সেই দরূদটি এভাবে উল্লেখ করা হয়নি।

“আল্লাহুম্মা সাল্লি ‘আলা মুহাম্মাদিনিন নাবিয়্যিল উম্মিয়্যি ওয়া ‘আলা আলিহি ওয়া আসহাবিহ্।”

এই ধরনের দরূদ পাঠ করার ব্যাপারে একটি রেওয়াত সাব্যস্ত হয়েছে। যদি কেউ এই দরূদটি পাঠ করেন তাহলে এটি পাঠ করা নাজায়েয নয়। কিন্তু রাসূলুল্লাহ্ ﷺ আমাদেরকে দরূদের ব্যাপারে যেই নির্দেশনা দিয়েছেন তার মধ্যে দরূদে ইবরাহীমের প্রতিই তিনি বেশি তা’কিদ বা গুরুত্ব দিয়েছেন। তাই কেউ যদি সবচেয়ে বেশি ফযীলতপূর্ণ দরূদ পড়তে চান তাহলে তিনি আল্লাহর নবী ﷺ সলাতের মধ্যে যেই দরূদটির অনুমোদন দিয়েছেন সেই দরূদটি পড়বেন এবং এ দরূদটি পড়াই হচ্ছে সবচেয়ে উত্তম। তবে এই সুনির্দিষ্ট দরূদ আসরের সলাতের পর পড়লে ৮০ বছরের গুনাহ্ মাফ হয়ে যাবে এবং ৮০ বছরের নফল ইবাদত তার ‘আমলনামায় লিখা হবে এই ধরনের বক্তব্য সরাসরি আল্লাহর নবী ﷺ এর হাদিস দ্বারা সাব্যস্ত হয়নি। এমনকি আমরা যেই দূর্বল বা মিথ্যা হাদিসের কথা উল্লেখ করেছি যেটি ইবনে শাহীন (রহ.) বর্ণনা করেছেন সেখানেও এই দরূদটির কথা উল্লেখ করা হয়নি। মুতলাক্ব দরূদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে অর্থাৎ সুনির্দিষ্টকোনো দরূদ নয়। রাসূলুল্লাহ্ ﷺ এর উপর যেকোনো ধরনের দরূদের কথা তিনি উল্লেখ করেছেন। তবে এই ফযীলতটুকু সহিহ সনদে সাব্যস্ত হয়নি। ওয়াল্লাহু আ’লাম।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *