জিহবার রক্ষণাবেক্ষণ করা
জিহবার রক্ষণাবেক্ষণ করা -১
আস সালামু আলাইকুম!
মূল: ইমাম নববী
মহান আল্লাহ তা’আলা বলেন:
“মানুষ যে কথাই উচচারণ করে, তার জন্য তৎপর প্রহরী তার নিকটেই রয়েছে ৷” (সূরা কাফ:১৮)
এবং তিনি বলেন:
“অবশ্যই তোমার প্রতিপালক সতর্ক দৃষ্টি রাখেন ৷” (সূরা আল-ফজর:১৪)
আমি পূর্বেই উল্লেখ করেছি, আল্লাহকে স্মরণ করার গ্রহণযোগ্য জিকিরের সে সমস্ত পদ্ধতি – যেগুলো আল্লাহ আমার জন্য সহজ করেছেন ৷ আমি সেই সাথে একজন মানুষের বক্তব্যের বা কথাবার্তার নিষিদ্ধ বা অপছন্দনীয় দিকগুলো তুলে ধরতে চাচ্ছি ৷ সুতরাং, সেগুলোর কিছু বৈশিষ্ট্য তুলে ধরবো, যা সম্পর্কে প্রত্যেক মুসলিমের সচেতন থাকা উচিত ৷
প্রত্যেক ব্যক্তি, যে তার কার্যসমূহের জন্য দায়িত্বশীল, তাকে অবশ্যই নিজের জিহ্বাকে সব ধরনের বক্তব্য বা কথা থেকে রক্ষা করা উচিত, কেবলমাত্র সে সমস্ত কথা ছাড়া যেগুলোর মধ্যে কোন মঙ্গল রয়েছে ৷ ফলে যে পরিস্থিতিতে কথা বলা বা না বলা উভয় অবস্থাই মঙ্গলজনক, সেক্ষেত্রে চুপ করে থাকাই হচ্ছে সুন্নাহ ৷ অনুমোদনযোগ্য বক্তব্য (যেক্ষেত্রে ভাল ও মন্দ সমান) নিষিদ্ধ এমনকি অপছন্দনীয় কাজের পথ সুগম করে দেয় ৷ বরং, বেশীরভাগ ক্ষেত্রে এটাই সাধারণত ঘটে থাকে এবং এক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন আদৌ কার্যকর হয়না ৷
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যে কেউ আল্লাহ এবং শেষ দিবসে বিশ্বাস রাখে, হয় সে ভাল কথা বলুক বা চুপ থাকুক ৷” (সহীহ আল-বুখারী ও মুসলিম) ৷
এ হাদীসটি, যার বিশুদ্ধতা নিয়ে আলেমগণের মধ্যে কোন দ্বিমত নেই, একটি সুস্পষ্ট প্রমাণ যে, একজন ব্যক্তির কথা বলা উচিত নয়, যদি না তার বক্তব্য ভাল হয় বা তার বক্তব্যের মধ্যে মঙ্গলজনক কিছু থাকে ৷ সুতরাং, কারো যদি সন্দেহ থাকে যে, তার বক্তব্য ভাল না মন্দ, তবে তার চুপ থাকাই উত্তম ৷
ইমাম আশ-শাফি’ঈ (রহ.) বলেছেন: “যখন কেউ কথা বলার ইচ্ছা রাখে, তখন তার বলার আগে চিন্তা করা উচিত ৷ সে যে কথা বলতে চায় সেটা যদি উপকারী হয়, তবে তার সেটা বলা উচিত ৷ আর যদি তার সে সম্পর্কে সন্দেহ থাকে, তবে কথা না বলাই উত্তম (যতক্ষণ না সে তার বক্তব্যকে সন্দেহমুক্ত করে নেয়) ৷”
আবু মুসা আল-আশআ’রী (রা.) থেকে বর্ণিত: আমি বললাম, “হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ৷ মুসলিমদের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম কে?” তিনি (সা.) বললেন: “সেই ব্যক্তি যার জিহবা ও হাত থেকে মুসলিমরা নিরাপদ ৷” (সহীহ বুখারী ও মুসলিম)
সাহল ইবন সা’দ (রা.) বর্ণনা করেছেন যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যে, “কেউ যদি আমাকে নিশ্চয়তা দিতে পারে যে, তার দু’চোয়ালের মাঝখানের অঙ্গ (জিহবা) এবং দু’পায়ের মধ্যবর্তী অঙ্গ (গুপ্তাঙ্গ) সম্পর্কে (যে সে সেগুলো সুরক্ষিত রাখবে), আমি তার জন্য জান্নাতের জামিন হতে পারি ৷” (সহীহ আল-বুখারী)
আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেছেন, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছেন, “বস্তুত আল্লাহর বান্দা কোন কথা বলবে যখন এর ফলাফল নিয়ে সে চিন্তা করবে না এবং এর পরিণতিতে সে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে, যার দূরত্ব হচেছ পূর্বদিক ও পশ্চিমদিকের মধ্যবর্তী দূরত্বেরও অধিক ৷” (সহীহ আল বুখারী ও মুসলিম)
সহীহ বুখারীতে এ শব্দগুলো পূর্ব দিকের উল্লেখ ব্যতীত এভাবে এসেছে; “যার দূরত্ব পশ্চিম দিকের চেয়েও অধিক৷” ‘অসচেতন ভাবে’-র অর্থ হচ্ছে যখন কোন লোক তার কথাটা ভাল না মন্দ তা চিন্তা করার জন্য থামে না ৷
আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: “বস্তুত, আল্লাহর বান্দাহ কোন কথা বলবে যেটা আল্লাহর কাছে পছন্দনীয়, যার ফলে আল্লাহ তা’আলা তার সম্মানকে আরও বৃদ্ধি করেন ৷ এবং সত্যিই আল্লাহর বান্দাহ এমন বাক্য উচচারণ করবে না যা আল্লাহর নিকট অপছন্দনীয়, ফলশ্রুতিতে তার মর্যাদা বৃদ্ধি পায়না কিন্তু সে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হয় ৷” (সহীহ বুখারী)
সুফিয়ান ইবন আবদিল্লাহ (রা.) বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বল্লেন: “হে আল্লাহর রাসূল (সা.) আমাকে এমন একটি বিষয় সম্পর্কে বলুন যার উপর আমি দৃঢ় থাকতে পারি ৷” তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, বল: “আমি আল্লাহতে বিশ্বাসী, এবং তারপর এর উপর দৃঢ় থেকো ৷” আমি বললাম: “হে আল্লাহর রাসূল (সা.), আমার জন্য আমি কোন বিষয়কে বা পরিস্থিতিকে সবচেয়ে ভয় করব ?” তখন তিনি (সা.) তার জিহবাকে ধরলেন এবং বললেন, “এইটি ৷” (৪:২৪১৩ হাসান, সহীহ আত-তিরমিযী, ইবন মাজাহ, আহমদ)
ইবন উমর (রা.) বর্ণনা করেছেন যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যে, “আল্লাহর স্মরণ ব্যতীত অধিক কথা বস্তুত অন্তরকে শক্ত করে দেয় ৷ এবং যাদের হৃদয় শক্ত, তারাই মূলত আল্লাহ থেকে অধিক দূরে ৷” (যয়ীফ, আত-তিরমিযী)
উকবা ইবন আমীর (রা.) থেকে বর্ণিত, আমি বললাম, “হে আল্লাহর রাসূল (সা.), একজন মানুষ কিভাবে নাজাত পেতে পারে?” তিনি (সা.) উত্তর দিলেন, “তোমার জিহবাকে সংযত রাখো, ঘরে অবস্থান করো এবং তোমার গুনাহ্সমূহের জন্য কান্নাকাটি কর ৷” (৪:২৪০৯ হাসান, আত-তিরমিযী, আহমদ)
আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “একজন ব্যক্তির দ্বীন পালনের সবচেয়ে ভাল দিক হচ্ছে যে, সে সেই বিষয়গুলো (সেগুলো নিয়ে কথা বলা) ত্যাগ করে যেগুলো তার সাথে সম্পর্কযুক্ত নয় ৷” (সহীহ, মালিক, আত-তিরমিযী)
এ বিষয় সম্পর্কে সালাফগণের প্রচুর বর্ণনা রয়েছে ৷ পূর্ববর্তী বিবরণীর পর সেগুলোর উল্লেখ জরুরী নয় ৷ তারপরও সংক্ষিপ্তভাবে তা উল্লেখ করা হল:
আবু আলী আল-ফুদাঈল ইবন ইয়াদ (রহ.) বলেছেন: “যে ব্যক্তি তার কথাবার্তাকে কমিয়ে এনেছে তার কর্মের সাথে সামঞ্জস্য রাখার জন্য, তার উচিত নয় সে সম্পর্কে কোন কথা বলা, যেটা তার সম্পর্কে নয় ৷”
আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ (রা.) বলেছেন: “অন্য যে কোন কিছু অপেক্ষা জিহবাকেই বেশী বন্দি করে রাখা উচিত ৷”
অন্যরা বলেছেন: “জিহবার উদাহরণ হচ্ছে একটি বন্য পশুর ন্যায় ৷ যদি তাকে বেঁধে না রাখো, এটি তোমার বিরুদ্ধে চলে যাবে ৷”
(চলবে……….ইনশা’আল্লাহ্!
জিহ্বার রক্ষণাবেক্ষণ করা – ২
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আস সালামু আলাইকুম!
মূল: ইমাম নববী
[আগের লেখার ধারাবাহিকতায়……………
এর আগের লেখাটা রয়েছে এখানে:
http://www.sonarbangladesh.com/blog/muslim55/22261 ]
গীবত ও পরচর্চার নিষিদ্ধকরণ
এ দু’টো জিনিস হচেছ সবচেয়ে গর্হিত ও ঘৃণ্য জিনিসগুলোর অন্যতম, তবুও মানবজাতির মধ্যে এগুলো এমনভাবে ছড়িয়ে রয়েছে যে, কোন ব্যক্তিই এর থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত নয়, শুধুমাত্র কিছু লোক ছাড়া ৷
গীবত বা পরনিন্দা তখনই করা হয়, যখন আপনি কোন ব্যক্তি সম্পর্কে এমন কিছু উল্লেখ করেন যা (তার অনুপস্থিতিতে, উল্লিখিত হলে) সে ঘৃণা করতো বা শুনে কষ্ট পেতো; হোক তা তার শরীর সম্পর্কে, তার দ্বীনের আচরণাদি সম্পর্কে, তার দুনিয়াবী বিষয়াবলী সম্পর্কে, তার নিজের সম্পর্কে, তার শারীরিক গঠন সম্পর্কে, তার চরিত্র সম্পর্কে, তার সম্পদ সম্পর্কে অথবা তার সন্তান, তার বাবা, তার স্ত্রী, তার চাকর, তার গোলাম, তার পাগড়ী, তার পোশাক, তার হাঁটার ধরন, তার হাসি, তার অসচ্চরিত্রতা, তার ভ্রূকুটি করা, তার উৎফুল্লতা বা উপরোল্লিখিত যে কোন কিছুর সাথে সম্পর্কযুক্ত ৷ তেমনিভাবে, তা গীবত হবে যদি – আপনি ওরকম কিছু মুখে উচচারণ করেন, লেখার মাধ্যমে প্রকাশ করেন বা আপনি তাকে চোখ, হাত বা মাথার ইশারায় নির্দেশ করেন ৷
শরীরের ক্ষেত্রে তখনই গীবত হয়, যখন আপনি বলেন: ‘সে অন্ধ’, ‘সে খোঁড়ায়; ‘সে ঝাপসা চক্ষু বিশিষ্ট’, ‘সে টেকো; ‘সে খাটো, ‘সে লম্বা,’ ‘সে কালো’, ‘সে হলদেটে’৷ তার দ্বীনের বৈশিষ্ট্যাবলীতে গীবত হবে, যখন বলা হয়: ‘সে একটা পাপী’ ‘সে একজন চোর’, ‘সে প্রতারক,’ ‘সে জালিম’, ‘সে তার সালাতকে হালকাভাবে দেখে’, ‘সে অপবিত্রতার ব্যাপারে বেখেয়ালী’, ‘সে তার বাবা-মার সাথে ভাল আচরণ করেনা’, ‘সে নিয়মিত যাকাত আদায় করে না’, এবং ‘সে পরনিন্দা (গীবত) থেকে বেঁচে থাকে না’। পার্থিব বিষয়ের ক্ষেত্রে পরনিন্দা বা গীবত হয়, যখন আপনি বলেন, ‘তার আচরণ খুব খারাপ’, ‘সে লোকদের ব্যাপারে অমনোযোগী’, ‘সে বেশী কথা বলে’, ‘সে বেশী খায় এবং ঘুমায়’, ‘সে ভুল সময়ে ঘুমায়’, ‘সে এমন স্থানে বসে থাকে যেটা তার নয়’ ইত্যাদি ৷
কারো বাবা-মার ক্ষেত্রে গীবত তখনই হবে, যখন আপনি বলেন, ‘তার বাবা একজন পাপী, ‘একজন ইন্ডিয়ান’, ‘একজন নাবাতিয়ান’, ‘একজন নিগ্রো’; ‘একটা লোফার’, ‘একজন বীজওয়ালা’, ‘একজন গরুর ব্যবসায়ী’, ‘একজন কাঠমিস্ত্রী’ ‘একজন কামার’, ‘একজন তাঁতী’; তার চরিত্র সম্পর্কে আপনি যখন উল্লেখ করেন, ‘তার আচরণ ভাল নয়’, ‘সে বদমেজাজী’, ‘সে ঝগড়াটে’, ‘সে খুব অপরিণামদর্শী ও অস্থির’, ‘সে জুলুমকারী,’ ‘সে দুর্বল’, ‘সে দুর্বল হৃদয়ধারী’, ‘সে দায়িত্বহীন’, ‘সে লম্পট’, ইত্যাদি ৷ পোশাকের ক্ষেত্রে : ‘এর হাতাগুলো প্রশস্ত’, ‘এর সেলাইগুলো ছোট’, ‘কি বিশ্রী পোশাক’! ইত্যাদি এবং অন্যান্য বিষয় ইত্যাদি ৷
অবশিষ্ট শ্রেণীগুলো সম্পর্কে উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে সহজেই অনুমান করা যায়, এ মূলনীতির ভিত্তিতে যে, কারো সম্পর্কে এমন কিছু উল্লেখ করা যা শুনতে সে অপছন্দ করে ৷
ইমাম আবু হামীদ আল-গাজ্জালী গীবত সম্পর্কে মতৈক্যকে এমনভাবে উল্লেখ করেছেন যে, “একজন ব্যক্তির অন্য লোকদের (তাদের অনুপস্থিতিতে) এমন কিছু উল্লেখ করা, যেটা উল্লিখিত হওয়া তাদের নিকট অপছন্দনীয় ৷”
পরচর্চা (নামিমাহ্) তখনই হয়, যখন কেউ একদল লোকের কথা অন্যদলের নিকট পৌঁছিয়ে দেয়, এই নিয়তে যে, তাদের মধ্যে ঝগড়া বা বিরোধের সৃষ্টি হোক ৷
এ হচেছ এ দু’টোর সংজ্ঞা ৷ এগুলোর ব্যাপারে ইসলামী বিধান হচ্ছে যে, এগুলো হারাম, যার ব্যাপারে আলেমগণের কোন দ্বিমত নেই ৷ কুর’আন ও সুন্নাহর সুস্পষ্ট প্রমাণাদির ভিত্তিতে এবং উম্মতের ঐক্যমত এগুলোর নিষিদ্ধ হওয়াকে সুনিশ্চিত করে ৷
আল্লাহ বলেন: “এবং তোমরা একে অপরের পিছনে নিন্দা করো না ৷” (সূরা হুজুরাত, ৪৯:১২)
এবং তিনি বলেন: “দুর্ভোগ প্রত্যেক সামনে এবং পিছনে নিন্দাকারীর’৷ (সূরা আল-হুমাজাহ, ১০৪:১)
এবং তিনি বলেন: “পশ্চাতে নিন্দাকারী, যে একের কথা অপরের কাছে লাগিয়ে বেড়ায় ৷” (সূরা কলম, ৬৮:১১)
হুজাইফা (রা.) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন, “যে ব্যক্তি পরচর্চা করে বেড়ায়, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না ৷” (সহীহ বুখারী, মুসলিম)
ইবন আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল (সা.) একদা দু’টি কবরের পাশ দিয়ে গেলেন এবং বললেন: “নিশ্চয়ই তারা (কবরবাসীগণ) নিদারুণ যন্ত্রণা ভোগ করছে এবং তারা কোন গুরুতর অপরাধের জন্য যন্ত্রণাভোগ করছে না ৷”
আল-বুখারীতে উল্লেখ আছে: “বরং এটি হচেছ বস্তুত একটি গুরুতর অপরাধ, প্রথমজনের ক্ষেত্রে, সে একের কথা অপরকে লাগিয়ে বেড়াতো এবং অপরজন, সে নিজেকে পেশাবের পবিত্রতা থেকে মুক্ত করতো না ৷” (সহীহ আল-বুখারী, মুসলিম)
আলেমগণ বলেন, “এবং তারা গুরুতর কিছুর জন্য নিদারুণ যন্ত্রণা ভোগ করছে না”-এর অর্থ হচেছ, তাদের মতে যা ‘গুরুতর কিছু’ ছিলনা, অথচ যেটা আসলে গুরুতর কিছু ছিল এবং তাদের সম্পূর্ণরূপে ত্যাগ করা উচিত ছিল ৷
আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেছেন যে, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদা (তাঁর সাহাবীগণকে) বললেন: “তোমরা কি জান গীবত কি?” তারা বললেন, “আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল (সা.) সবচেয়ে ভাল জানেন ৷” তিনি বললেন: “তোমার ভাই সম্পর্কে এমনকিছু উল্লেখ করা (তার অনুপস্থিতিতে), যেটা সে ঘৃণা করে (যে সেটা উল্লেখিত হোক)” ।
তাঁকে (সা.) জিজ্ঞাসা করা হল: “যদি তার মধ্যে সেই দোষ থাকে, যেটা আমি তার সম্পর্কে উল্লেখ করলাম?” তিনি (সা.) উত্তর দিলেন: “তুমি তার সম্পর্কে যা বললে, সেটা যদি তার মধ্যে উপস্থিত থাকে, তবে তুমি তার গীবত করলে এবং তুমি তার সম্পর্কে যা বললে, তা যদি তার মধ্যে পাওয়া না যায়, তবে তুমি তার সম্পর্কে অপবাদ দিলে ৷” (সহীহ মুসলিম)
আবু বকর সিদ্দীক (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল (সা) বিদায় হজ্বের ভাষণে বলেন, “বস্তুত, তোমাদের রক্ত, তোমাদের সম্পদ এবং তোমাদের সম্মান তোমাদের জন্য পবিত্র, তেমনি এ দিনটি তোমাদের জন্য পবিত্র এ ভূমিতে, এ মাসে ৷ আমি কি তা পৌঁছিয়ে দিইনি ?” (সহীহ আল-বুখারী)
আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত, আমি রাসূলুল্লাহ (সা) কে বললাম: “আপনি সাফিয়্যা থেকে এই এই বেশী” ৷ [কোন কোন বর্ণনাকারী বলেছেন এটা বোঝাচ্ছে যে, তিনি ক্ষুদ্রাকৃতির ছিলেন], তো তিনি (সা.) বললেন: “তুমি এমন একটি কথা উচচারণ করলে, সেটিকে যদি সমুদ্রের পানির সাথে মিশ্রিত করা হত, তবে তা সে পানিকেও বিবর্ণ করে দিত ৷” (সহীহ আবু দাউদ, আত-তিরমিযী এবং আহমদ)
আত-তিরমিযী এ হাদীসকে হাসান সহীহ বলে উল্লেখ করেছেন ৷ আমি(নববী) বলি যে, ‘বিবর্ণ’ (মাঝাজা) শব্দটির অর্থ হচেছ যে, “তা পানির সাথে এমনভাবে মিশ্রিত হত যে, তা পানির স্বাদ এবং গন্ধকে পরিবর্তন করে ফেলতো – এর দুর্গন্ধ ও বীভৎসতার কারণে ৷ এ হাদীসটি গীবত হারাম হওয়ার ব্যাপারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণগুলোর অন্যতম, যদি না এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয় ৷
“এবং তিনি (রাসূল) কোন মনগড়া কোন কথা বলেন না, বরং এটি হচেছ ওহী যা তার প্রতি প্রত্যাদেশ হয়” ৷ (সূরা নজম, ৫৩:২-৩)
আনাস (রা.) বর্ণনা করেছেন যে, আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেছেন: “যখন আমি আকাশে আরোহণ করলাম, আমি দেখলাম একদল লোকের নখগুলো পিতলের তৈরী, যার দ্বারা তারা নিজেদের মুখ ও বুকগুলো খামচাচ্ছিল ৷ ফলে আমি বললাম, ‘হে জিব্রাইল, এ লোকগুলি কে?’ তিনি বললেন, ‘তারা হচ্ছে সে সমস্ত লোক যারা অন্যের গোশত খেতো অর্থাৎ গীবত করতো এবং তাদের অসম্মানিত করতো ৷’ “ (সহীহ আহমদ, আবু দাউদ)
জিহ্বার রক্ষণাবেক্ষণ করা – ৩
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আস সালামু আলাইকুম!
মূল: ইমাম নববী
[আগের লেখার ধারাবাহিকতায়……………
এর আগের লেখাগুলো রয়েছে এখানে:
http://www.sonarbangladesh.com/blog/muslim55/22261
http://www.sonarbangladesh.com/blog/muslim55/22909]
গীবতের সীমা সম্পর্কিত বিষয়সমূহ
পূর্ববর্তী অধ্যায়ে, আমরা বলেছি যে, গীবত তখনই হয় যখন একজন ব্যক্তি অন্য ব্যক্তি সম্পর্কে তার অনুপস্থিতিতে এমন কিছু ব্যক্ত করে, যা শুনতে সে ঘৃণা করে, এখন তা মৌখিক উক্তিই হোক বা লেখনীর মাধ্যমে বা হাত, মাথা বা চোখের ইশারায় হোক ৷
এর নির্দেশাবলী: এমন সবকিছু যার দ্বারা একজন ব্যক্তি অন্য এক মুসলিমের যে সকল দোষ রয়েছে তা বুঝাতে সক্ষম হয়, সেটিই হচেছ গীবত এবং এটা ‘হারাম’ ৷
উদাহরণস্বরূপ, কেউ যখন কাউকে ছোট করার উদ্দেশ্য নিয়ে অন্য এক ব্যক্তিকে বলে ‘অমুক ব্যক্তি’ হাঁটার সময় খোঁড়ায় বা কুঁজো হয়ে থাকে বা এ ধরনের কিছু বলে ৷ এগুলো সবকিছুই হারাম (নিষিদ্ধ) – এ ব্যাপারে কোন দ্বিমত নেই ৷ এর আর একটি উদাহরণ হচেছ, একজন লেখক, যখন নির্দিষ্ট কোন ব্যক্তিকে ছোট করার উদ্দেশ্য নিয়ে লেখে, ‘অমুক অমুক’ ব্যক্তি একথা বলেছে…..”৷ এটি হারাম ৷ যাহোক, যদি তার এ উদ্দেশ্য থাকে সে ব্যক্তিটির দোষ উল্লেখ করলে কেউ সেটা অনুসরণ করবে না বা সেই ব্যক্তির জ্ঞানের অপূর্ণতাকে পরিস্কারভাবে তুলে ধরা, যাতে করে সে অন্যদের ভুল পথে পরিচালনা না করে বা মতামত কেউ গ্রহণ না করে, তবে সেটা গীবত নয় ৷ বরং, সেটা হচেছ উপদেশ (নাসীহাহ্) এবং একটি নৈতিক দায়িত্ব, যার কারণে সে পুরস্কৃত হবে যদি সত্যিই তার নিয়ত এমন থাকে ৷ তেমনিভাবে, যদি কোন লেখক বা কোন লোক সাধারণভাবে কোন কিছু বলে এভাবে “এ লোকগুলো বা এই দল এরকম চিন্তাভাবনা করে এবং এটি ‘দোষযুক্ত’ বা ‘ভুল’ বা ‘অজ্ঞানতা’ বা ‘অবহেলা’ বা এরকম কিছু, তাহলে সেটা গীবত নয় ৷ গীবত কেবলমাত্র তখনই হয় যখন কোন ব্যক্তি একজন নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা একটি নির্দিষ্ট দলের লোকদের সম্পর্কে কিছু বলে (নাম উল্লেখপূর্বক) ৷
খারাপ ধরনের গীবতের মধ্যে আরেকটি হচেছ, যখন কেউ বলে: ‘কোন কোন ব্যক্তি এই ধরনের কাজ করছিল’ বা ‘আলেমদের মধ্যে কেউ কেউ’ বা ‘কোন কোন ব্যক্তি যাদের জ্ঞান আছে বলে দাবী করে’ বা ‘কোন কোন মুফতী বা কোন কোন ব্যক্তি যারা নিজেদের উম্মতের সংশোধনকারী হিসেবে গণ্য করেন’ বা ‘যারা সংযমের দাবী করে বা যারা আমাদের অতিক্রম করে গিয়েছিল’ বা ‘কিছু লোক যাদের আমরা দেখেছিলাম বা এ ধরনের কিছু….’ এই এই করেছিল; কাউকে নির্দিষ্ট না করে, কিন্তু এরপরও যাকে কথাগুলো বলা হচেছ, তিনি বুঝতে পারেন কোন লোকদের সম্পর্কে বলা হচেছ, কেননা বক্তার কথার ধরনই এমন থাকে যে তা বোঝা যায় ৷
এর আর একটি ধরন হচেছ যে, ধার্মিক ও জ্ঞানী ব্যক্তিদের গীবত ৷ কেননা তারা গীবত করে ফেলে যখন তারা (যাদের সম্পর্কে বলা হচেছ, তাদের নির্দিষ্ট না করেও) অন্যদের বোঝাতে সক্ষম হয় কাদের সম্পর্কে বলা হচেছ ৷ উদাহরণস্বরূপ, যখন তাদের কাউকে জিজ্ঞেস করা হয়, ‘অমুক ব্যক্তিটি কেমন লোক?’ হয়ত তিনি উত্তর দেন, “আল্লাহ আমাদের সংশোধন করুন” বা “আল্লাহ আমাদের মাফ করুন” বা “আল্লাহ তাকে সংশোধন করুন”, “আমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই”, “আমরা আল্লাহর কাছে মদ থেকে পানাহ চাই” বা “আল্লাহ আমাদের তাওবা কবুল করুন” এবং এ ধরনের উক্তি সমূহ, যার দ্বারা যে কেউ ঐ ব্যক্তির দোষসমূহ সম্পর্কে বুঝতে পারে ৷ এগুলো হচেছ খারাপ ধরনের গীবত৷ তেমনিভাবে, এটি একই রকম, যদি কেউ বলে: “অমুক ব্যক্তি পরীক্ষিত হচেছ যেমনিভাবে আমরা সকলেই পরীক্ষার সম্মুখীন হই” বা “আমরা সকলেই এ ধরনের কাজ করে থাকি ৷” এগুলো হচেছ গীবতের উদাহরণ এবং ব্যাপারটি যদি এরকম নাও হয়, তবুও আমরা গীবতের মূলনীতির দিকে ফিরে যাবো যেটা হচেছ: একজন ব্যক্তির জন্য অন্য লোকদের দোষ সম্পর্কে শ্রোতাকে অবগত করা (তাদের নামোল্লেখ না করেও), যা আগে বর্ণিত হয়েছে ৷
গীবত করা যেমনভাবে একজন বক্তার জন্য হারাম, তেমনিভাবে এটি তার জন্য হারাম যে গীবত শোনে এবং সেটাকে সমর্থন করে ৷ সুতরাং, একজন ব্যক্তির পক্ষে যে কোন ব্যক্তিকে গীবতের মত খারাপ কাজ করতে দেখলে তাকে বাধা দেয়া তার জন্য অবশ্যকর্তব্য যতক্ষণ না এতে তার কোন সামনাসামনি ক্ষতির আশংকা থাকে ৷ কিন্তু তিনি যদি কোন ক্ষতির ভয় করেন, তবে তিনি সেই গীবত বা পরনিন্দাকে অন্তর থেকে ঘৃণা করবেন এবং নিজেকে এ ধরনের বৈঠক থেকে দূরে রাখবেন ৷ যদি তার এরূপ ক্ষমতা থাকে যে, তিনি সেটাকে তার জিহ্বা দিয়ে অস্বীকার করতে পারবেন বা বিষয়কে অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিতে পারবেন, তবে তার সেটাই করা উচিত এবং যদি তা না করেন, তবে সেটা হবে একটা গুনাহর কাজ ৷ যদি তিনি মুখে চুপ করতে বলেন, কিন্তু মনে মনে গীবতকে চালু রাখার ইচছা করেন, তবে আবু হামিদ আল গাজ্জালী বলেছেন: “এটি হচেছ মুনাফিক্বী ৷ এটি গুনাহ থেকে বাঁচাতে পারবেনা ৷ বরং, তাকে অবশ্যই সেটাকে অন্তর থেকে ঘৃণা করা উচিত ৷”
যদি তাকে এ ধরনের বৈঠকে বসে থাকার জন্য চাপ দেয়া হয় যেখানে পরনিন্দা হচেছ বা তিনি তা নিষিদ্ধ করতে ভয় পান বা তিনি বাধা দেন, কিন্তু তাতে যদি লাভ না হয় এবং তাদের থেকে বিচিছন্ন হওয়ারও কোন পথ না থাকে, এমতাবস্থায় এ ধরনের গীবতে কান দেয়া বা এর প্রতি মনোযোগ দেয়া তার জন্য হারাম ৷ এর পরিবর্তে, তিনি আল্লাহর জিকিরে মগ্ন হবেন তার জিহবা বা অন্তর দ্বারা বা কেবলমাত্র তার অন্তর দ্বারা ৷ বা তিনি ভাল কিছু চিন্তা করতে থাকবেন যাতে করে তিনি গীবত শোনা থেকে বিরত থাকতে পারেন ৷ এরকম পরিস্থিতিতে তিনি এ ধরনের পদক্ষেপগুলো নিলে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না ৷ যদি তার পক্ষে এরপর তাদের নিকট হতে বিচিছন্ন হওয়া সম্ভবপর হয় এবং তারা তখনও পরনিন্দায় মগ্ন থাকে, তবে নিজেকে আলাদা করা তার জন্য অবশ্যকর্তব্য ৷ আল্লাহ বলেন :
“এবং তুমি যখন দেখ, তারা আমার আয়াতসমূহ সন্বন্ধে উপহাসমূলক আলোচনায় মগ্ন হয় তখন তুমি তাদের নিকট হতে সরে পড়বে, যে পর্যন্ত না তারা অন্য প্রসঙ্গে প্রবৃত্ত হয় এবং শয়তান যদি তোমাকে ভ্রমে ফেলে তবে স্মরণ হওয়ার পর যালিম সম্প্রদায়ের সাথে বসবে না ৷” (সূরা আল-আন‘আম, ৬:৬৮)
জিহ্বার রক্ষণাবেক্ষণ করা – ৪
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আস সালামু আলাইকুম!
মূল: ইমাম নববী
[আগের লেখার ধারাবাহিকতায়, যেগুলো এখানে রয়েছে:
www.peaceinislam.com/muslim55/4733/
www.peaceinislam.com/muslim55/4942/
www.peaceinislam.com/muslim55/5043/ ]
একজন ব্যক্তি কিভাবে নিজেকে গীবত থেকে রক্ষা করবে ?
এ অংশটি কুর’আন ও সুন্নাহর আলোকে নানা প্রমাণ সমৃদ্ধ ৷ কিন্তু আমি অল্প কিছু উদাহরণ এখানে উল্লেখ করব ৷ ফলে যারা সৌভাগ্যশালী তারা এ থেকে উপকৃত হবেন ৷ আর যারা সৌভাগ্যবান নন, তাদের নিকট যদি বিপুল পরিমাণে প্রমাণ উপস্থিত থাকে, তবুও তারা উপকৃত হবেন না ৷
এ অধ্যায়ের মূল লক্ষ্য হচেছ পাঠক যাতে পূর্ববর্তী অধ্যায়সমূহে উল্লিখিত গীবত থেকে বেঁচে থাকার পদ্ধতিগুলো নিজে অনুসরণ করেন এবং তারপর আল্লাহ তা‘আলার এ বাণী নিয়ে চিন্তা করেন :
“কেউ কোন কথাই উচ্চারণ করেনা, এটা (অর্থাৎ এই অবস্থা) ছাড়া যে, একজন প্রহরী (ফেরেশতা) তা লিপিবদ্ধ করার জন্য সদাপ্রস্তুত রয়েছেন ৷” (সূরা কাফ, ৫০:১৮)
এবং আল্লাহর বাণী :
“এবং তোমরা এটাকে তুচ্ছ জ্ঞান করেছিলে, যদিও আল্লাহর নিকট এটা ছিল গুরুতর বিষয় ৷” (সূরা নূর, ২৪:১৫)
তার (পাঠকের) অবশ্যই পূর্ববর্তী অধ্যায়সমূহে বর্ণিত জিহবাকে সুরক্ষিত রাখার এবং পরনিন্দা থেকে বেঁচে থাকার পদ্ধতিগুলোর উপর চিন্তা করা উচিত ৷ প্রতিটি ব্যক্তিরই উচিত তার প্রত্যেকটি উক্তির সময় এগুলোকে সংযুক্ত ও কার্যকর করা যেমন (যে কোন কথা বলার আগে সে নিজেকে বলবে): ‘আল্লাহ তা’আলা আমার কাছে রয়েছেন’, ‘আল্লাহ আমাকে দেখছেন’, ‘আল্লাহ আমাকে লক্ষ্য করছেন’ ৷
একদা এক লোক হাসান আল বসরীকে বললেন: “আপনি আমার গীবত করছেন ৷” তিনি বললেন, “আপনার পরিচয় কি যাতে আমি জানতে পারি, কার নিকট আমার সৎকর্মগুলো চলে যাচেছ ?”
এবং আবদুল্লাহ ইবন আল মুবারক বলেছেন: “আমি যদি কারো গীবত করতাম, তবে আমি আমার পিতামাতারই গীবত করতাম, কেননা তারাই আমার ভাল কাজগুলো পাওয়ার বেশী যোগ্য ৷”
জিহ্বার রক্ষণাবেক্ষণ করা – ৫
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আস সালামু আলাইকুম!
মূল: ইমাম নববী
কোন ধরনের গীবত অনুমোদিত ?
যদিও গীবত করা হারাম, কোন কোন পরিস্থিতিতে গীবত করার অনুমোদন রয়েছে – যখন তা কোন মঙ্গলের জন্য করা হয়ে থাকে ৷ গীবত করার এ ক্ষমতা কেবলমাত্র একটা ন্যায়সঙ্গত ও বৈধ কারণেই প্রদান করা যাবে, অন্যথায় এর অনুমতি দেয়া যাবে না ৷ নিম্নের ছয়টি কারণের যে কোন একটি কারণে গীবত করা যেতে পারে:
১.জুলুম/নিপীড়নের বিচার চাইতে – যে ব্যক্তি নিপীড়িত হয়েছে, তার জন্য এই অনুমতি রয়েছে যে, সে তার অবস্থা সম্পর্কে শাসক বা বিচারককে বা অন্য যে কাউকে অবগত করতে পারে, যার ক্ষমতা রয়েছে তাকে জালিমের বিরুদ্ধে সুবিচার দেয়ার ৷ তাকে উল্লেখ করতে হবে, “অমুক লোক আমার প্রতি অন্যায় করেছে” এবং “সে আমার সাথে এই করেছে” এবং “সে আমাকে দমিয়ে রেখেছে এভাবে” বা এরকম আরো তথ্য ৷
২.একটি মন্দকে পরিবর্তন করা এবং পাপীকে সঠিক পথের দিকে ফিরিয়ে আনতে সাহায্য চাওয়া– একজন ব্যক্তির উচিত, যার পক্ষে কোন মন্দ কাজ থামানো সম্ভব তাকে বলা, “অমুক ব্যক্তি এরকম করেছিল, ফলে আমি তাকে তা থেকে বিরত রাখি” বা এরকম কিছু ৷ তার লক্ষ্যই হবে মন্দকে সম্পূর্ণরূপে দূর করা ৷ যদি এ ধরনের কোন উদ্দেশ্য না থাকে, তবে তার জন্য কোন কথা উল্লেখ না করাই উত্তম ৷
৩.ফতোয়া (ইসলামী বিধান) চাওয়া/জানা – একজন ব্যক্তির উচিত একজন মুফতীকে (যিনি ফতোয়া দিতে পারেন) বলা: “আমার বাবা” বা “আমার ভাই” বা “এই এই ব্যক্তি আমার সাথে এইরূপ অন্যায় করেছে ৷ তার কি এটা করার অধিকার রয়েছে?” – “কিভাবে আমি সেটা বন্ধ করতে পারি এবং আমার উপর থেকে জুলুম বন্ধ করে আমার অধিকার আদায় করতে পারি?” এবং এরকম আরো তথ্য ৷ এমনিভাবে, একজন বলতে পারে যে, “আমার স্ত্রী এরূপ করেছে” বা “আমার স্বামী এরূপ করেছে” এবং এরকম আরো তথ্য ৷ প্রয়োজনের তাগিদে এ ধরনের ফতোয়া চাওয়া অনুমতিযোগ্য, কিন্তু সাবধানতা অবলম্বনের জন্য যে কারো উচিত এভাবে বলা, “একজন ব্যক্তি সম্পর্কে আপনি কি বলেন – যে এরূপ করেছে?” বা “একজন স্বামীর ব্যাপারে” বা “একজন স্ত্রী সম্পর্কে যে এরূপ করেছিল” (আমার স্ত্রী এভাবে না বলে) ইত্যাদি ৷ এই পদ্ধতিতে, কাউকে নির্দিষ্ট করে উল্লেখ না করেই লক্ষ্য অর্জন করা যায় ৷ যাহোক, একজন ব্যক্তির নামোল্লেখ করা এরকম পরিস্থিতিতে অনুমোদিত এ হাদীসের ভিত্তিতে যে, হিন্দ (রা.) একবার রাসূলুল্লাহ (সা.) কে জানান, “বস্তুত, আবু সুফিয়ান (তার স্বামী) একজন কৃপণ লোক ৷” এবং আল্লাহর রাসূল (সা.) তাকে একথা বলা থেকে বিরত রাখেননি ৷
৪.মুসলিমদের পাপ সম্পর্কে সতর্ক করা এবং উপদেশ দেয়া – এর বেশ কয়েকটি দিক রয়েছে, এর মধ্যে রয়েছে: কাউকে হাদীস বর্ণনা ও সাক্ষ্য দেয়ার ব্যাপারে অনির্ভরযোগ্য ঘোষণা করা ৷ ইজমা (মুসলিম স্কলারদের ঐক্যমত) অনুযায়ী এটি করা জায়েয ৷ বরং গুরুত্বের ভিত্তিতে এটি কখনও কখনও অবশ্যকর্তব্য হয় ৷ আরেকটি অবস্থা হচ্ছে, যখন কোন ব্যক্তি কারো সাথে সম্পর্কযুক্ত হয়, বিবাহ, ব্যবসা, সম্পত্তি হস্তান্তরের সময়, দৈনন্দিন লেনদেন ও যেকোন কিছু হস্তান্তরের সময় বা অনুরূপ কোন পরিস্থিতে – আপনার জন্য ফরয সেই ব্যক্তিকে অপর ঐ ব্যক্তি সম্বন্ধে অবগত করা, যার সঙ্গে সে লেনদেন করতে যাচ্ছে – উপদেশের লক্ষ্যে ৷ যদি আপনার উদ্দেশ্য এ কথা বলাতেই অর্জিত হয় যে “তার সাথে ব্যবসায়িক লেনদেনে জড়ানো আপনার জন্য মঙ্গলজনক নয়” বা এটা বলাতেও, “আপনার এটা করা উচিত নয়” বা এধরনের কিছু, তবে সেটুকুতেই সারতে হবে; তাই বলে ঐ লোকটির অন্যান্য (প্রসঙ্গ বহির্ভূত) খারাপ দোষগুলো সম্পর্কে জানানো যাবে না ৷ আর যদি এতে কাজ না হয়, তবে আপনি নির্দিষ্টভাবে লোকটির অবস্থা সম্পর্কে তাকে অবগত করতে পারেন ৷
আর একটি অবস্থা হচেছ, যখন আপনি কাউকে এমন কোন লোকের কাছ থেকে কোন কিছু কিনতে দেখেন, যে নাকি চুরি, ব্যভিচার বা মদ্যপানের মত অপরাধের সাথে জড়িত ৷ তখন ক্রেতাকে এ সম্পর্কে অবগত করানো আপনার কর্তব্য, যেহেতু তিনি জানেন না ৷ এমনকি, এটা তখনও প্রযোজ্য যখন আপনি জানেন লোকটি যে বস্তুটি কিনতে যাচেছ তা ত্রুটিযুক্ত ৷
আর একটি ব্যাপার হচেছ যে, যখন আপনি কোন শিক্ষার্থীকে (দ্বীনের ক্ষেত্রে) দেখেন একজন বিদ‘আতী বা পথভ্রষ্ট ব্যক্তির কাছ থেকে জ্ঞানার্জন করছে এবং আপনি তার ক্ষতির আশংকা করেন ৷ তখন আপনি অবশ্যই সেই ছাত্রকে উপদেশ দেয়ার লক্ষ্যে সে ব্যক্তির অবস্থা সম্পর্কে অবগত করবেন ৷ এক্ষেত্রে অনেক মানুষই ভুল করে থাকে, কেননা ব্যক্তিটি যার সম্পর্কে উপদেশ দিচ্ছেন তার ব্যাপারে তিনি ঈর্ষাপরায়ণ হতে পারেন বা শয়তান তাকে ভুল পথে নিয়ে যেতে পারে, এভাবে যে, তিনি ভাবতে পারেন যে তিনি যেটা করছেন তা হচেছ নসীহত এবং সমবেদনা প্রকাশ করা ৷
সর্বশেষে যে অবস্থাটি এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য, যখন কোন ব্যক্তি কোন নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করছে এবং সে তার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করছেনা কেননা সে উপযুক্ত নয় বা সে একজন অমনোযোগী বা পাপী ইত্যাদি ৷ এমতাবস্থায় একজন ব্যক্তির উচিত অন্যরা যারা তার উপর নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন, তাদের নিকট বিষয়টি জানানো, যাতে তাকে এই পদ থেকে সরানো যায় এবং একজন উপযুক্ত ব্যক্তিকে দায়িত্ব দেয়া যায় ৷ অথবা, যাদের সে ব্যক্তিটির উপর ক্ষমতা রয়েছে তারা যেন তার সম্পর্কে জানতে পারেন, যেন তার দ্বারা যাতে ক্ষতি সাধন না হয় তার ব্যবস্থা করতে পারেন বা তাকে ভাল হতে উদ্বুদ্ধ করতে পারেন বা অন্য কাউকে তার স্থলাভিষিক্ত করতে পারেন ৷
৫.যখন কেউ উন্মুক্তভাবে মন্দকর্ম বা বিদআতী কাজে লিপ্ত থাকে – এর উদাহরণ হচেছ যখন কেউ খোলাখুলিভাবে মদপান করে, লোকের টাকা আত্মসাৎ করে এবং তাদের নিকট থেকে অন্যায়ভাবে ট্যাক্স নেয় ইত্যাদি ৷ ফলে জনসাধারণের সামনে ঐ ব্যক্তিটি যে সকল কাজ করে, তা নিয়ে আলোচনা করা বা কথা বলা বৈধ ৷ কিন্তু ঐ লোকের অন্যান্য দোষত্রুটি সম্পর্কে আলোচনা করা নিষিদ্ধ যতক্ষণ না সেগুলো ঐ ক্যাটাগরীতে পড়ে, যে সকল কারণে গীবত করা জায়েয ৷
৬.কোন ব্যক্তিকে সংজ্ঞায়িত করা – কোন ব্যক্তি যদি লোকজনের নিকট তার ডাক নামে পরিচিত থাকে, যেমন ‘ঝাপসা চোখ বিশিষ্ট যিনি’, ‘যিনি খোঁড়ান’, ‘বধির লোকটি’, ‘অন্ধ লোকটি’, ‘টেরা চক্ষু বিশিষ্ট’, ‘চ্যাপ্টা নাকওয়ালা’, ইত্যাদি ৷ তাহলে তাকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করার জন্য এভাবে বলা জায়েয ৷ যাহোক, তাকে হেয় করার জন্য এরকম নামকরণ করা নিষিদ্ধ ৷ যদি তাকে অন্য কোনভাবে চিহ্নিত করা যায়, তবে তাকে সেভাবেই চিহ্নিত করা উচিত ৷
এগুলো হচ্ছে সেই ছয়টি অবস্থা যে ক্ষেত্রে গীবত করা জায়েয, যদি তা আলেমগণ যেভাবে দিক নির্দেশনা দিয়েছেন সেভাবে করা হয়ে থাকে ৷ সহীহ হাদীস থেকেও এসব পরিস্থিতে গীবত করার অনুমোদন পাওয়া যায় ৷
সহীহ আল বুখারী ও মুসলিমে আয়েশা (রা) বলেছেন, একজন লোক রাসূল (সা.) নিকট তার গৃহে প্রবেশের অনুমতি চাইলে, তিনি বললেন: “তাকে আসার অনুমতি দাও, এবং সে তার আত্মীয়স্বজনের জন্য কত খারাপ ভাই ৷”
আল বুখারী এ হাদীসটিকে গীবত করার ক্ষেত্রে প্রমাণস্বরূপ ব্যবহার করেছেন ৷
ইবন মাসুদ (রা.) বর্ণনা করেছেন, “আল্লাহর রাসূল (সা.) যুদ্ধলব্ধ সম্পদের একাংশ বন্টন করছিলেন, তো একজন আনসারী বলল, “আমি আল্লাহর নামে শপথ করে বলছি, মোহাম্মদ আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের ইচ্ছা রাখে না (অর্থাৎ, তিনি ন্যয্যভাবে বন্টন করেননি) ।” ফলে আমি আল্লাহর রাসূল (সা.) এর নিকট গেলাম এবং তাঁকে ব্যাপারটি জানালাম ৷ তাঁর চেহারা পরিবর্তিত হয়ে গেল (অর্থাৎ তিনি রাগান্বিত হলেন) এবং বললেন: “আল্লাহ তা’আলা মূসা (আ)-এঁর উপর রহম করুন ৷ বস্তুত তিনি এর চেয়ে গুরুতরভাবে অভিযুক্ত হয়েছিলেন, কিন্তু তিনি ধৈর্যশীল ছিলেন ।” (সহীহ বুখারী ও মুসলিম)
তাছাড়া হিন্দ (রা.) থেকে বর্ণিত হাদীসটি রয়েছে, যেখানে তিনি বলেছেন, “বস্তুত আবু সুফিয়ান হচ্ছে একজন কৃপণ ব্যক্তি ৷”
এবং এ হাদীসটি যেখানে রাসূলুল্লাহ (সা.) ফাতিমা বিনতে কায়েসকে (রা.) বললেন (দু’জন পানিপ্রার্থীর প্রসঙ্গে): “মুয়াবিয়ার ক্ষেত্রে, সে হচ্ছে খুবই দরিদ্র এবং আবু জাহম এর ব্যাপারটি হচেছ, সে তার কাঁধ থেকে লাঠি নামায় না অর্থাৎ, ‘সে তার বউদের মারধর করে’ ৷” (সহীহ মুসলিম)
জিহ্বার রক্ষণাবেক্ষণ করা – ৬
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আস সালামু আলাইকুম!
মূল: ইমাম নববী
যখন কেউ তার শাঈখ, বন্ধু বা অন্য কোন ব্যক্তির সন্বন্ধে গীবত শুনে, তখন সে কি করবে?
একজন ব্যক্তি, যে একজন মুসলিম ভাই সম্পর্কে গীবত শুনে, তার উচিত এর প্রতিবাদ করা এবং যে ব্যক্তি গীবত করছে তাকে বাধা দেয়া ৷ যদি তিনি তাকে তার মুখ দ্বারা বাধা দিতে না পারেন, তবে তিনি তার হাত দ্বারা তাকে বাধা দিবেন ৷ যদি তিনি তার হাত বা জিহবা কোনটি দ্বারাই বিরত না রাখতে সক্ষম হন, তবে তার সে স্থানটি ত্যাগ করা উচিত ৷ এবং যদি তিনি শুনেন যে, তার শাঈখ বা শিক্ষক সম্পর্কে গীবত করা হচ্ছে – বা যে কেউ, যার তার উপর অধিকার রয়েছে এমন ব্যক্তি সম্পর্কে, বা এমন একজন ব্যক্তি সম্পর্কে গীবত করা হচ্ছে যিনি সৎকর্মশীল ও উচ্চমর্যাদাসম্পন্নদের অন্তর্ভুক্ত, তবে তার উদ্বেগ আরও বেশী হওয়া উচিত ৷
আবু আদ দারদা (রা.) বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন “যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের সম্মানহানি থেকে বিরত থাকেন, আল্লাহ তার চেহারাকে শেষ বিচারের দিনে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচিয়ে রাখবেন ৷” (হাসান বা সহীহ আত-তিরমিযী, আহমদ)
সহীহ আল বুখারীতে ও মুসলিমে ইতবান (বা কারো কারো উচ্চারণে উৎবান) এর দীর্ঘ ও বিখ্যাত হাদীস হতে বর্ণিত, যে, “রসূলুল্লাহ (সা.) একবার সালাত আদায়ের জন্য দাঁড়িয়ে গেলেন, তখন লোকেরা বলল: “মালিক ইবন আদ–যুখসুম কোথায়?” একজন লোক বলল: “ঐ মুনাফিক! আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সা.) তাকে ভালবাসেন না”। তখন রাসূল (সা.) বললেন, “ঐ কথা বলনা! তুমি কি দেখনা সে বলে, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ (আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই) এবং এর মাধ্যমে সে আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের আশা রাখে ?” (সহীহ আল বুখারী, মুসলিম)
কাব ইবন মালিক (রা.) তার তওবা সংক্রান্ত দীর্ঘ হাদীসে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) তাবুকে (Tabuk) কয়েকজন লোকের সাথে বসা অবস্থায় জিজ্ঞাসা করলেন, “কাব বিন মালিক কি করছিল?” বানু সালিম গোত্রের এক লোক বলল, “হে আল্লাহর রাসূল (সা.) তার জোববার সৌন্দর্য ও তার জমকালো পোশাকের আকর্ষণ তাকে প্ররোচিত করে ও তার বিলম্ব ঘটায় (অর্থাৎ অভিযানে গিয়ে যুদ্ধ করতে!)”
এটা শোনামাত্র মুয়ায ইবন জাবাল (রা.) তাকে বললেন: “তুমি কতই না মন্দ কথা বললে! আমি আল্লাহর নামে শপথ করে বলছি হে রাসূলুল্লাহ (সা.), আমরা তার সম্পর্কে ভাল ছাড়া মন্দ কিছু জানিনা ৷” ফলে, রাসূলুল্লাহ (সা.) চুপ করে রইলেন ৷ (সহীহ আল বুখারী ও মুসলিম)
মুয়ায ইবন আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি একজন বিশ্বাসীকে একজন মুনাফিক হতে রক্ষা করে, আল্লাহ তা’আলা একজন ফেরেশতা পাঠাবেন যিনি তার চামড়াকে জাহান্নামের আগুন হতে রক্ষা করবেন এবং যে, কোন একজন মুসলিমকে হেয় করার মনোভাব নিয়ে, কোন কারণে তাকে দোষী সাব্যস্ত করল, আল্লাহ তা’আলা তাকে জাহান্নামের সেতুর উপর ঝুলিয়ে রাখবেন যতক্ষণ না সে তার কথা ফিরিয়ে নেয় ৷” (হাসান, আবু দাউদ, আহমদ)
অন্তরের গীবত
কোন ব্যক্তি সম্পর্কে খারাপ মন্তব্য করা যেমনি নিষিদ্ধ, তেমনি কারো সম্পর্কে কু ধারণা পোষণ করাও নিষিদ্ধ ৷ সুতরাং, যেমনিভাবে কোন ব্যক্তির দোষত্রুটি সম্পর্কে অন্যদের বলা হারাম, তেমনিভাবে নিজের কাছে তা বলা এবং তার সম্পর্কে খারাপ ধারণা রাখাও হারাম ৷ আল্লাহ বলেন:
“হে মুমিনগণ! তোমরা অধিক অনুমান করা হতে দূরে থাক, কারণ অনুমান কোন কোন ক্ষেত্রে পাপ ৷” (সূরা হুজুরাত, ৪৯:১২)
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেছেন: “সন্দেহ থেকে বেঁচে থাকো, কেননা সত্যিই সন্দেহ হচ্ছে সবচেয়ে অসত্য বক্তব্য ৷” (সহীহ আল বুখারী ও মুসলিম)
অন্তরের গীবত হচ্ছে সেই গীবত, যখন হৃদয় কারো সম্পর্কে দৃঢ়ভাবে খারাপ ধারণা পোষণ করে থাকে ৷ তবে আলেমগণের মতে, যে চিন্তাসমূহ হঠাৎ করেই মনে উদয় হয় এবং যেটা মানুষ নিজের মনে বলে থাকে, সেগুলো যতক্ষণ না দৃঢ়ভাবে অন্তরে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে বা তার মধ্যে চলমান থাকছে, ততক্ষণ তা ক্ষমাযোগ্য ৷ এটি এ কারণে যে, এ ধরনের ধারণাকে রোধ করা বা না করার ব্যাপারে তার কোন হাত নেই ৷
আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেছেন :
“আসলেই আল্লাহ আমার উম্মতকে অব্যাহতি দিয়েছেন, তাদের অন্তরসমূহ তাদের যা বলে থাকে তা থেকে, যতক্ষণ না তারা সেটা প্রকাশ করে বা তা কার্যে পরিণত করে ৷” (সহীহ আল বুখারী ও মুসলিম)
স্কলারদের মতে, “এটা সেই সমস্ত ধারণাসমূহ নির্দেশ করে, যেগুলো একজনের মনে জন্ম নেয়, কিন্তু তা প্রতিষ্ঠিত বা স্থায়ী হয়না ৷”
এবং তারা বলেছেন : “ধারণাগুলো যদি গীবত, অবিশ্বাস বা এ ধরনের কিছু হয়, তবে সেগুলো বিবেচনার বিষয় নয় (অর্থাৎ সেগুলো ক্ষমার্হ, যতক্ষণ সেগুলো স্থায়ী না হয় ), উদাহরণস্বরূপ যে ব্যক্তির অন্তর কুফরী চিন্তায় ভরে উঠে, কিন্তু সেগুলো কেবলই ধারণা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকে, সেগুলো কার্যকর করার কোন উদ্দেশ্য যার থাকে না এবং যখনই তা মনে আসে তখন তিনি সেগুলো মন থেকে ঝেড়ে ফেলেন, তবে তিনি অবিশ্বাসী বা গুনাহগার নন ৷”
সাহাবাগণ একবার রাসূলুল্লাহ (সা.) কে বললেন: “হে রাসূলুল্লাহ (সা.)! আমাদের কারো কারো মনে এমন চিন্তার উদয় হয় যেটা সম্পর্কে কথা বলাও ভয়ংকর ৷” তখন তিনি (সা.) বললেন, “সেটা হচ্ছে ঈমানের প্রমাণ ৷” (সহীহ মুসলিম)
এ চিন্তা বা ধারণাসমূহ এ কারণে ক্ষমাযোগ্য যে, এ ধরনের চিন্তাকে পরিহার করা বা বাধা দেয়া অসম্ভব ৷ বরং একজন ব্যক্তি এ ধরনের চিন্তাকে মনের মধ্যে স্থায়ী ও প্রতিষ্ঠিত হতে বাধা দিতে পারেন ৷ এজন্যই অন্তরে এ সমস্ত চিন্তা স্থায়ী রাখা হারাম বা নিষিদ্ধ ৷
তাই যখনই এ ধরনের চিন্তাসমূহ – যেগুলো গীবত বা অন্য ধরনের পাপপূর্ণ চিন্তা সম্বলিত – কারো মনের মধ্যে উদিত হয়, সেগুলো তাড়িয়ে দেয়া, সেগুলো থেকে দূরে থাকা এবং মনে এ সম্পর্কে ব্যাখ্যা বা ওজর পেশ করা উচিত যাতে করে মনে যা উদিত হয় তা পরিবর্তিত হয়ে যায় ৷
আবু হামিদ আল গাজ্জালী তার ইয়াহ্ইয়া উলুমুদ্দিন-এ বলেছেন: “যদি আপনার মনে কোন কু ধারণা উত্থিত হয়, তবে সেগুলো শয়তানের ওয়াসওয়াসার ফলে ঘটে থাকে, যা সে আপনার মনে স্থায়ী করে ৷ সুতরাং, আপনার উচিত সেগুলোকে অস্বীকার ও বাতিল করা কেননা সে (শয়তান) হচ্ছে মন্দ কর্মীদের/অসৎ কর্মীদের (ফাসিক) মধ্যে সবচেয়ে খারাপ ৷
এবং আল্লাহ বলেন :
‘হে মু’মিনগণ! যদি কোন পাপাচারী তোমাদের নিকট কোন বার্তা আনয়ন করে, তোমরা তাহা পরীক্ষ করিয়া দেখিবে, পাছে অজ্ঞানতাবশত তোমরা কোন সম্প্রদায়কে ক্ষতিগ্রস্ত করিয়া বস, এবং পরে তোমাদের কৃতকর্মের জন্য তোমাদিগকে অনুতপ্ত হইতে হয় ।’ (সূরা হুজুরাত, ৪৯:৬)৷
তাই ইবলিসে বিশ্বাস করা আপনার উচিত নয় ৷ এবং যদি এমন কোন লক্ষণ প্রকাশিত হয় যে, কোন ব্যক্তি দুর্নীতিবাজ কিন্তু সে এর বিপরীতটি করে, তবে তার সম্পর্কে কুধারণা করা যাবে না ৷ কারো সম্পর্কে কুধারণা পোষণ করার লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে যে, আপনার অন্তর তার ব্যাপারে পরিবর্তিত হয়ে যাবে অর্থাৎ আগে যে রকম ছিল সেরকম থাকবেনা, আপনি তার থেকে পালিয়ে বেড়াবেন এবং তাকে আপনার অসহ্য মনে হবে ৷ এবং তার জন্য উদ্বিগ্ন হওয়া, তার জন্য সহমর্মিতা অনুভব করা বা তার প্রতি দয়া প্রকাশের ব্যাপারে আপনি অলসতা অনুভব করবেন ৷ এবং সত্যি শয়তান একজন ব্যক্তির হৃদয়ের কাছাকাছি চলে আসে যখন মানুষের মধ্যে যৎসামান্য ত্রুটি দেখা দেয়, এবং সে এগুলো আপনার মধ্যে তৈরী করে যদিও আপনি মনে করেন যে, এগুলো আপনার বিচক্ষণতা, জ্ঞান ও সতর্কতার জন্য ঘটেছে ৷ কিন্তু একজন বিশ্বাসী আল্লাহর নূর দ্বারা দেখে ৷ তাই এ ব্যক্তি প্রকৃতপক্ষে শয়তানের প্রতারণামূলক ও মন্দ ষড়যন্ত্রের শিকার ৷ এবং কোন বিশ্বাসী বা ঈমানদার ব্যক্তি যদি আপনাকে এ সম্পর্কে কিছু জানায়, তবে না তাকে বিশ্বাস করবেন, না তাকে অস্বীকার করবেন ৷ যাতে করে আপনার মনে কারো সম্পর্কে কুধারণা না আসে ৷
যখনই কোন মুসলিম সম্পর্কে কোন মন্দচিন্তা আপনার মনে উদয় হয়, তখন আপনার উচিত তার সম্পর্কে আরও উদ্বিগ্ন ও সহানুভূতিশীল হওয়া, কেননা তা শয়তানকে রাগান্বিত করে এবং আপনার নিকট হতে তাকে সরিয়ে দেয় ৷ ফলে সে আপনার মধ্যে এ ধরনের খারাপ চিন্তা আর স্থাপন করতে পারবে না এই ভয়ে যে, সেগুলো কেবলমাত্র লোকটির জন্য আপনার দোয়াই বৃদ্ধি করবে ৷ এবং যখন আপনি কোন মুসলমান ভাই–এর দোষ বা ভুল সম্পর্কে কোন প্রমাণের ভিত্তিতে অবগত হন , যেটা অনস্বীকার্য, তখন আপনি তাকে উপদেশ দিবেন এবং শয়তানকে আপনি ধোঁকায় ফেলার সুযোগ দিবেন না যাতে আপনি গীবতের দিকে চলে যান ৷ এবং আপনি যখন ঐ ব্যক্তিকে মৃদু র্ভৎসনা করবেন তখন এমনভাবে তাকে তিরস্কার করবেন না যে, আপনি তার ক্ষুদ্রতা সম্পর্কে জেনে খুশী এবং সন্তুষ্ট ৷ বরং, এমনভাবে দুঃখিত হওয়া উচিত, যেমনিভাবে আপনি নিজের মধ্যে কোন দোষত্রুটি দেখলে দুঃখিত ও হতাশ হন ৷ এবং তিরস্কার ব্যতীত তার গুনাহমুক্ত হওয়া আপনার কাছে আরো প্রিয় হওয়া উচিত ৷”
এগুলো হচ্ছে আল-গাজ্জালীর মতামত ৷ আমার (অর্থাৎ ইমাম নববীর) মতে, কোন ব্যক্তির মনে যদি অন্য কোন ব্যক্তি সম্পর্কে মন্দ ধারণা দেখা দেয়, তবে তার উচিত সেসব খারাপ চিন্তাকে দূর করা – যদি না এভাবে চিন্তা করার মধ্যে ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে কোন মঙ্গল থাকে ৷ সুতরাং যদি এ ধরনের কোন কারণ থাকে, তবেই তার দোষত্রুটি সম্পর্কে চিন্তা করা অনুমোদিত ৷ এমনকি সেটা সম্পর্কে কোন সাক্ষী বা সংবাদদাতার ভিত্তিতে সমালোচনা করা বা সতর্ক করা জায়েয ৷
জিহ্বার রক্ষণাবেক্ষণ – ৭
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আস সালামু আলাইকুম!
মূল: ইমাম নববী
গীবত থেকে বাঁচা ও অনুতপ্ত হওয়া
এটি অত্যন্ত জরুরী যে, কোন ব্যক্তি যদি একটি গুনাহ করে, তার সে গুনাহর জন্য দ্রুত তওবা করা উচিত ৷ আল্লাহ তা’আলার অধিকারসমূহের বিষয়ে ‘তওবা’-র তিনটি শর্ত রয়েছে:
১.একজন লোক অবশ্যই সাথে সাথে ঐ গুনাহর কাজটি ছেড়ে দিবে ৷
২. সে এ কাজটি করার জন্য দুঃখিত ও লজ্জিত হবে।
এবং
৩. সে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হবে গুনাহর কাজটি আর না করার জন্য ৷
মানুষের অধিকারসমূহের বিষয়ে তওবার ক্ষেত্রে উপরোক্ত তিনটি শর্ত ছাড়াও আরেকটি শর্ত পূরণ করতে হয় ৷ সেটা হচেছ:
৪.কারো উপর কোন নির্যাতন বা জুলুম হলে, তা ফিরিয়ে নেয়া বা তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা বা তা থেকে মুক্ত হওয়া ৷
সুতরাং, যে ব্যক্তি গীবত করে, তার জন্য উপরোক্ত চারটি শর্ত পূরণ করে তওবা করা অবশ্যকর্তব্য ৷ কেননা গীবত অন্যের অধিকারকে সন্বন্ধযুক্ত করে ৷ তাই ঐ ব্যক্তির উচিত যার সম্পর্কে গীবত করা হয়েছে, তার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করা ৷
এখন একজন ব্যক্তির কি এটা বলাই যথেষ্ট যে “আমি তোমার সম্পর্কে গীবত করে ফেলেছি, সুতরাং দয়া করে আমাকে এ থেকে মুক্ত কর” বা তাকে জানানো জরুরী যে সে তার সম্পর্কে কি বলেছে?”
এ ব্যাপারে শাফি’ঈ আলেমগণের দু’টি মত রয়েছে:
প্রথম মতে, ঐ ব্যক্তি গীবত করার সময়ে কি বলেছিলেন তা জানানো একটি শর্ত ৷ কেননা, এ ক্ষেত্রে তিনি ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে কি বলেছিলেন তা না জানিয়ে যদি দোষ থেকে মুক্ত হতে চান, তবে তার ক্ষমা প্রার্থনা বৈধ হবে না, ঠিক যেমন করে কোন লোকের টাকা আত্মসাৎ করলে, তা থেকে নিজেকে মুক্ত করতে হয় ৷
দ্বিতীয় মতানুসারে, ঐ ব্যক্তিকে জানানো জরুরী নয় যে, গীবতকারী কি বলেছিল, কেননা এটি এমন একটি বিষয় যে সে তা সহ্য করতে পারবে না এবং ক্ষমাও করতে পারবেনা ৷ সুতরাং, তার জানাটা (সে কি বলেছিল) এক্ষেত্রে শর্ত নয়, যেটা টাকা আত্মসাৎ এর উদাহরণের বিপরীত ৷
প্রথম মতটিই জোরালো, যেহেতু লোকদের কোন কোন গীবত ক্ষমা করার ব্যাপারে যোগ্যতা রয়েছে কিন্তু অন্য ব্যাপারে নেই ৷ এবং যে ব্যক্তির ব্যাপারে গীবত করা হয়েছে, সে যদি মৃত বা অনুপস্থিত থাকে – তবে গীবতকারীর জন্য দোষ থেকে মুক্ত হওয়া জরুরী নয় ৷ যাহোক আলেমগণ বলেন : দোষী ব্যক্তিটি সে লোকটির জন্য বেশী বেশী দোয়া করবে এবং অনেক বেশী নেক আমল করবে ৷
যার সম্পর্কে গীবত করা হয়েছে, সে ব্যক্তির জন্য গীবতকারীকে পাপ থেকে মুক্ত করা পছন্দনীয় – কিন্তু তিনি সেটা করতে বাধ্য নন ৷ যেহেতু, এটা হচেছ একজন ব্যক্তির অধিকার লংঘনের ক্ষতিপূরণ, তাই সেটা হচ্ছে তার ইচ্ছাধীন ৷ যাহোক, এটি খুব দৃঢ়ভাবে সুপারিশকৃত (mutaiakkidah) যে, তিনি যেন গীবতকারীকে দোষমুক্ত করেন যাতে করে, তার মুসলিম ভাইটি সে গুনাহের ক্ষতি থেকে বাঁচতে পারেন এবং যাতে তিনি আল্লাহ তা’আলার ক্ষমা ও ভালবাসা অর্জন করে সফলকাম হন ৷ মহান আল্লাহ তা’আলা বলেন :
“এবং যারা ক্রোধ–দমনকারী এবং মানুষের প্রতি ক্ষমাশীল, আল্লাহ সৎকর্মপরায়ণদের ভালবাসেন ৷” (সূরা আলে-ইমরান, ৩:১৩৪)
দোষী ব্যক্তিকে ক্ষমা করার জন্য তিনি যে পন্থা অবলম্বন করতে পারেন, তা হচ্ছে এই যে, তিনি নিজেকে মনে করিয়ে দিতে পারেন: “এ বিষয়টি ইতোমধ্যে ঘটে গেছে, এটা দূর করার কোন উপায় নেই ৷ সুতরাং, তার পুরস্কার পাওয়ার সুযোগকে ব্যাহত করাটা এবং তাকে পাপ থেকে মুক্ত না করাটা আমার জন্য ঠিক নয় ৷”
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেন :
“অবশ্য যে ধৈর্য ধারণ করে এবং ক্ষমা করে দেয়, সেটা তো হবে দৃঢ় সংকল্পের কাজ ৷” (সূরা শূরা ৪২:৪৩)
এবং তিনি বলেন:
“ক্ষমা প্রদর্শন কর ৷” (সূরা আরাফ, ৭:১৯৯)
সহীহ হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন :
“এবং আল্লাহ তাঁর বান্দার সাহায্য করতে থাকেন যতক্ষণ বান্দা তার মুসলিম ভাইকে সাহায্য করতে থাকে ৷” (সহীহ মুসলিম)
সুতরাং, গীবতকারীকে পাপমুক্ত ও ক্ষমার ব্যাপারে উদ্বুদ্ধকরণের ব্যাপারে যা উল্লেখ করলাম তা সঠিক ৷
জিহ্বার রক্ষণাবেক্ষণ – শেষ পর্ব
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আস সালামু আলাইকুম!
মূল: ইমাম নববী
পরচর্চা সম্পর্কে
আমরা ইতোমধ্যে পরচর্চা নিষিদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে প্রমাণ উল্লেখ করেছি এবং এর শাস্তি সম্পর্কেও উল্লেখ করেছি ৷ আমরা এর সংজ্ঞাও উপস্থাপন করেছি, যদিও সংক্ষিপ্তাকারে ৷
ইমাম আবু হামিদ আল গাজ্জালী (রহ.) বলেছেন:
“পরচর্চা তাকেই বলে যখন একজন ব্যক্তি একজনের কথাকে অন্য আর এক ব্যক্তির কাছে বর্ণনা করে ৷ এর একটি উদাহরণ হচ্ছে যখন কেউ বলে: ‘ঐ ব্যক্তিটি তোমার সম্পর্কে এই এই বলেছে ৷’ যাহোক, পরচর্চা কেবলমাত্র এ উদাহরণে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এর পরিসর হচ্ছে এমন কিছু প্রকাশ করা, যা প্রকাশিত হলে একজন ঘৃণা করে – তা এমনও যদি হয় যে, সেই ব্যক্তি যার নিকট হতে বর্ণনা করছে বা যার নিকট বর্ণনা করছে বা অন্য কোন ব্যক্তি সেটা ঘৃণা করে ৷ তা বক্তব্যের মাধ্যমে করা হোক, লেখনীর মাধ্যমে বা অঙ্গভঙ্গী ইত্যাদির মাধ্যমে যেভাবেই করা হয়ে থাক না কেন – তা সর্বক্ষেত্রেই এক এবং যেটা বর্ণনা করা হচ্ছে তা একজনের বক্তব্য বা কাজ সম্পর্কেই হোক বা একজনের দোষত্রুটি বা অন্যকিছু হোক ৷ সুতরাং, পরচর্চার ধরনই হচেছ: যা গোপন রাখা দরকার তা প্রকাশ করা, এর গোপনীয়তাকে ধবংস করা যা ঐ ব্যক্তি প্রকাশিত হলে অপছন্দ করে ৷
একজন ব্যক্তি কোন লোকের অবস্থা সম্পর্কে দেখলে বা শুনলে চুপ করে থাকবে, যদি না তা প্রকাশ করার মধ্যে কোন মুসলিমের কোন মঙ্গল থাকে বা তা একটি গুনাহ সংঘটিত হওয়া থেকে বিরত রাখে ৷”
এবং তিনি বলেছেন :
“যার নিকট পরচর্চা করা (namemah) এবং বলা হয়: ‘অমুক অমুক ব্যক্তি আপনার সম্পর্কে এই বলেছে ৷’ তখন তার জন্য ছয়টি বিষয় জরুরী:
১.তিনি অবশ্যই ঐ ব্যক্তিকে বিশ্বাস করবেন না, কেননা যে সংবাদটি দিচ্ছে সে একজন পরচর্চাকারী (namah), এবং পরচর্চাকারী হচেছ একজন দুষ্ট লোক (ফাসিক), সুতরাং তার সংবাদসমূহ প্রত্যাখ্যাত ৷
২.তিনি তাকে এ ধরনের কাজ করতে নিষেধ করবেন, উপদেশ দিবেন এবং তার কাজের ঘৃণ্য দিকটা প্রকাশ করবেন ৷
৩.তিনি অবশ্যই তাকে আল্লাহর জন্য ঘৃণা করবেন, কেননা সে আল্লাহর নিকট ঘৃণ্য এবং আল্লাহর জন্য ঘৃণা করা ফরয ৷
৪.যার বক্তব্য লোকটি বর্ণনা করছে তার সম্পর্কে তিনি অবশ্যই কোন খারাপ ধারণা পোষণ করবেন না, কেননা আল্লাহ বলেন:
“তোমরা অনুমান থেকে বেঁচে থাকো ৷”(সূরা হুজুরাত,৪৯:১২)
৫.আপনার কাছে (একজন সম্পর্কে) কিছু বলা হলে তা যেন আপনাকে বিষয়টি সম্পর্কে গুপ্তচরবৃত্তি করতে বা আরো তদন্ত করতে প্ররোচিত না করে, কেননা আল্লাহ বলেন:
“এবং একে অপরের পশ্চাতে নিন্দা করনা ৷”(সূরা হুজুরাত, ৪৯:১২)
৬.তিনি পরচর্চাকারীকে যে কাজ করতে মানা করেছেন, তিনি নিজের এ কাজে যেন সন্তুষ্ট না হয়ে যান ৷ এরূপে তিনিও অন্যকে গুজবের ব্যাপারটি জানাবেন না এ বলে যে, ‘অমুক অমুক লোকে আমাকে এ কথা বলেছে’ – কেননা তখন তিনি নিজে একজন পরচর্চাকারী হয়ে যাবেন এবং তিনি তা–ই তিনি নিজে মানা করেছেন ৷”
এটি বর্ণিত আছে যে, একজন লোক উমার ইবন আব্দুল আজিজ (রহ.) কাছে গেল এবং তাকে অন্য ব্যক্তি সম্পর্কে কিছু বলল, উমার (রহ.) তাকে বললেন, “তুমি যদি চাও তাহলে আমরা তোমার বিষয়টি তদন্ত করে দেখব ৷ আর যদি তোমার কথা অসত্য হয়, তবে তুমি ঐ আয়াতের শ্রেণীভুক্ত যাদের সম্পর্কে এ আয়াত বর্ণিত হয়েছে: “যদি কোন ফাসিক লোক তোমাদের নিকট কোন বার্তা আনয়ন করে, তোমরা তা পরীক্ষা করে দেখবে ৷’ ” (সূরা হুজুরাত, ৪৯:৩)
এবং তোমার বক্তব্য যদি সত্য হয়, তবে তুমি এ আয়াতের শ্রেণীভুক্ত :
‘পিছনে নিন্দাকারী, যে একের কথা অপরের নিকট লাগিয়ে বেড়ায় ৷’ (সূরা কলম, ৬৮:১১)
আর যদি তুমি চাও আমরা ব্যাপারটি উপেক্ষা করতে পারি ৷” তখন লোকটি বলল, “দয়া করে ব্যাপারটি উপেক্ষা করুন, ঈমানদার সেনাপতি! আমি আর এর উল্লেখ করবো না ৷”
–সমাপ্ত–