লিখেছেন লোনার ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১১, সকাল ১১:১৬

“এক টুকরা স্বল্প-পরিসর কাপড়, তাই দিয়ে শরীর ঢাকতে হবে – শরীরের একপাশ ঢাকলে আরেক পাশ উন্মুক্ত হয়ে যায়” – এরকম অভিব্যক্তি আমরা প্রায়ই দেখি/শুনি। ইসলাম সম্বন্ধে নিজে যা জেনেছি বা পড়েছি – তা অন্যকেও জানাতে চেয়েই মূলত কলম ধরা – ম্যাসেজটা কেবল পৌঁছে দেয়া এবং যথাসম্ভব বাক-বিতন্ডা এড়িয়ে চলা। ইসলাম নিয়ে লিখতে গিয়ে “কোথা থেকে শুরু করবো?” – এই প্রশ্নের উত্তর তাত্ত্বিক পর্যায়ে একেবারে মুখস্ত: তৌহীদ – বা আল্লাহর একত্ব তথা অদ্বিতীয়তা নিয়ে লেখাটাই সব সময় অগ্রাধিকার পাবে – এটাই স্বাভাবিক! কারণ জীবনে/সমাজে তৌহীদ প্রতিষ্ঠিত হলেই ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হবে – তা না হলে নয়। তথাপি ইসলামকে deconstruct করার শতমুখী ও শতরূপী প্রচেষ্টা দেখে আমাদের “প্রতিক্রিয়াশীল” মন বিচলিত হয় – ইচ্ছা হয় সে সবকে মোকাবেলা করার । আমরা জানি একটা দালানের ভিত্তিটা যদি শক্ত হয়, তবে ২/১টা ইঁট খসে পড়লে হয়তো তেমন ক্ষতি হবে না – তবে এটাও সত্য কোন এটা দালান ভেঙ্গে ফেলার প্রক্রিয়া যখন শুরু হয়, তখন ১টা/২টা ইঁট ভাঙ্গা দিয়েই তা শুরু হয়। ব্লগে তাই ইসলামকে deconstruct করার নানাবিধ প্রক্রিয়া দেখে সবসময় চুপ করে থাকা বেশ কষ্টকর বোধ হয়। তাছাড়া এটাও তো ঠিক যে, একটা শরীর সব দিক দিয়েই সুস্থ এটা একটা অবস্থা – কিন্তু হাজার ধরনের মারাত্মক রোগের যে কোন একটি এসে বাসা বাঁধতে পারলেই হয়তো সেই সুস্থ শরীরটাকে যেমন অকেজো করে ফেলতে পারে – তেমনি হাজারো ইসলামবিচ্যুতির কোন একটি জীবনে প্রবেশ করলেই, তা হয়তো একজন খাঁটি ঈমানদারকেও বিপথগামী করতে পারে। এভাবে ভাবলে মাঝে মাঝে হতাশই লাগে! কোয়ান্টাম মেথডের অতল গহ্বরের দিকে আহ্বান না ইসলামপন্থীর লেবাসে “সুশীল” তথা “প্রগতিশীল”দের তারেক মাসুদের শিল্পকর্মের গুণগ্রাহী হবার আহ্বান; রুজ-লিপিস্টিক মেখে “মুহাযযাবাহ্” গোত্রীয় ইসলামী ফ্যাশন প্যারেডের আহ্বান নাকি ইংলন্ড/আমেরিকায় বসে অত্যন্ত কষ্টকর গবেষণার মাধ্যমে আবিষ্কৃত “ইসলামী গণতন্ত্রের” আহ্বান – কোনটা রেখে কোনটার দিকে মনযোগ দেবেন – নিজে সতর্ক হবেন এবং অপরকে সতর্ক করবেন?? কে বেশী ক্ষতিকর: খাঁটি কাফির না কি কাফিরকে অনুকরণ করতে চাওয়া “মুসলিম নামধারী সংস্কারপন্থী ও আধুনিকতাবাদী” ঘরের শত্রু বিভীষণ??

আজকের লেখাটয় আপনাদের সাথে একটা হাদীস শেয়ার করবো ইনশা’আল্লাহ্!

আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের উদ্দেশ্যে একটি সরলরেখা আঁকলেন এবং বললেন: এটা আল্লাহর পথ। এরপর এর ডানে ও বামে কতগুলো রেখা টানলেন এবং বললেন: এগুলো বিভিন্ন পথ, এগুলোর প্রত্যেকটির উপর একজন করে শয়তান আছে যে সে দিকে আহবান করে, এরপর পাঠ করলেন: “আর নিশ্চয়ই এটি আমার সরল পথ, তোমরা এর অনুসরণ কর…(কুর’আন, ৬:১৫৩)” [আহমদ, আন-নাসাঈ, আদ-দারিমী, আলবানীর মতে হাসান]

এই হাদীসটা অনেক দিন ধরেই আমার জানা। কিন্তু এই হাদীস সম্বন্ধে যেটা অনেকদিন জানা হয়নি তা হলো: এখানে যে শয়তানদের কথা বলা হয়েছে, সেগুলো মানবরূপী শয়তানও হতে পারে। এভাবে ভাবলে সমীকরণ মিলে যায়। এ সব শয়তানরা অদৃশ্য কায়াবিহীন কোন সৃষ্টি নয় বরং আপনার আমার আশ-পাশেই জীবন-যাপন-করা আমাদেরই আত্মীয়-বন্ধু: রক্ত-মাংসের মানুষ! তবে বুঝে হোক বা অজ্ঞতায়ই হোক এরা মানুষের চিরন্তন শত্রু ইবলিসের প্রকল্প বাস্তবায়ন করে চলেছেন। ইবলিস যেমন বহুরূপী – আমাদের প্রিয় শত-সহস্র রূপে আবির্ভূত হয়ে আমাদের জাহান্নামের পথে ডাকে, তেমনি এরাও – এই মানবরূপী শয়তানরাও – কত শৈল্পিক ও পরিশীলিত উপায়ে আমাদের জাহান্নামের পথে ডাকে। এদের কথাই সম্ভবত আল্লাহ্ কুর’আনে বলেছেন এভাবে:

وَإِذَا قِيلَ لَهُمْ لَا تُفْسِدُوا فِي الْأَرْضِ قَالُوا إِنَّمَا نَحْنُ مُصْلِحُونَ (11) أَلَا إِنَّهُمْ هُمُ الْمُفْسِدُونَ وَلَكِنْ لَا يَشْعُرُونَ
“আর যখন তাদেরকে বলা হয়, ‘তোমরা যমীনে ফাসাদ করো না’, তারা বলে, ‘আমরা তো কেবল সংশোধনকারী’। জেনে রাখ, নিশ্চয় তারা ফাসাদকারী; কিন্তু তারা বুঝে না।”

(কুর’আন, ২:১১~১২)

এই ব্লগে লিখতে শুরু করে দেখলাম একজন তথা-কথিত জনপ্রিয় নারীবাদী ব্লগার “মেয়েদের করা কুর’আনের তফসীরের” দাবী জানিয়েছেন। মুসলিম হিসেবে তার স্ট্যাটাস কি সেটা মুফতিরা ঠিক করবেন। কিন্তু তার ঐ ধরনের চিন্তা-ভাবনা আমার কাছে উপরে আলোচিত সমস্যার আলোকে বেশ বিপজ্জনক ও বিপথগামী মনে হয়েছে। আমি তখন “ইসলামী feminism” বলে একটা সিরিজ লিখতে শুরু করি। তিনটা পর্ব লেখার পরে অনেকটা সময়ের অভাবেই, ইচ্ছা থাকলেও আর লেখা হয়ে ওঠে না – তবে অচিরেই আবার লিখবো: এমন একটা ভাব মনে পোষণ করে আসছিলাম। এমতাবস্থায় অনুভব করি যে “কোয়ান্টাম মেথড” নিয়ে কিছু লেখা দরকার। সেটা নিয়ে, বিতর্ক এড়িয়ে কেবল informative একটা সিরিজ সম্পন্ন করার চেষ্টা করি। এর পর পরই ব্লগের জনপ্রিয় একজন “Five Star” ব্লগার, ইসলামকে একটা “দর্শন” হিসাবে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করলে সেটার প্রতিবাদে একটা পোস্ট লিখতে চেষ্টা করি। যারা নিজেদের “ভালো মুসলিম” বা এমন কি ইসলামপন্থীও মনে করেন – তাদের “ধাক্কা” সামলাতেই দিশেহারা হতে হয় – তার উপর তো কাফির, মুশরিক, হাফ-কাফির, সংশয়বাদী, ইসলামবিদ্বেষী “ভিক্টোরিয়া”, “খালেদ”, “বিলকিস”, “লায়লারা” রয়েছেনই। এরা কারা আমার জানা নেই। তবে সুপরিকল্পিত উপায়ে, অবোধ ও নিজের-দ্বীন-না-জানা নির্বোধ মুসলিমদের মনে সংশয়ের বীজ বপন করার নিরলস প্রচেষ্টার জন্য তাদের “বাহ্বা” দিতে হয় বৈকি। এদের প্রচেষ্টার জবাবে এরপর ছোট্ট একটা দলিল-ভিত্তিক পোস্ট দিতে হয় “ইসলাম ও দাসপ্রথা” নিয়ে।

মাননীয় পাঠক, আমি এই পোস্টের “শিরোনামের” যথার্থতা বোঝাতে এত কথা বললাম। তবে আমার মত “প্রতিক্রিয়াশীল” ব্লগারের আজকের কলম ধরা অন্য কারণে – এই ব্লগের অপর একজন “Five Star” ব্লগার সম্প্রতি তার দু’টো পোস্টে (মূলত) মুসলিমদের এমন দু’টো পথে আহ্বান করেছেন যে গুলো, উপরে বর্ণিত হাদীসের “বিভিন্ন পথ” [অর্থাৎ, রাসূলের(সা.) পথ ব্যতীত অন্য পথ] বলেই আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি – ওয়া আল্লাহু ‘আলাম! পোস্ট দু’টোর একটি ছিল “মিউজিক” নিয়ে, আর অপরটি ছিল “গণতন্ত্র” নিয়ে। “মিউজিক” নিয়ে পোস্টের একটা লাইন ছিল এমন:
“এই গানটি’র কথা বুঝার চেষ্টা করুনতো।নিউইয়র্কে কয়েক হাজার মানুষ মিছিল করে ইসলামের জন্য যা করতে পারবে এই একটি গান তার চেয়ে বেশি ম্যাসেজ দেয়ার ক্ষমতা রাখে।” তার এই বক্তব্যে, কিছুদিন আগে উপমহাদেশে ইসলামের প্রচার-প্রসার নিয়ে ইসলামী ফাউন্ডেশনের ডি.জি.-র করা একটা বিতর্কিত মন্তব্যের সাথে অত্যন্ত সদৃশ। আমি ইনশাল্লাহ্ অচিরেই তার “আহবানের” প্রতিক্রিয়ায় কিছু “প্রতিক্রিয়াশীল” পোস্ট লেখার ইচ্ছা পোষণ করি। আজকের এই লেখা কেবল আপনাদের কাছে নিজের অবস্থা এবং অবস্থান তুলে ধরার একটা প্রচেষ্টা!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *