بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
السلام عليكم ورحمة الله و بركاته

আগেই যেমন বলেছি যে, এখন থেকে প্রায় ১২০০ বছর আগে রচিত “আল আক্বীদাহ্ আল তাহাভীয়াহ্” ছিল আক্বীদাহর উপর এক যুগান্তকারী কাজ যা নিয়ে, যার ব্যাখ্যা নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে পরবর্তী সময়ের বহু আলেমের জীবন কেটে গেছে। “আল আক্বীদাহ্ আল তাহাভীয়াহ্”-য় লিপিবদ্ধ ইসলামী বা মুসলিমদের ধর্মীয় বিশ্বাসের ১০৫ টি পয়েন্টের প্রথম ২৮টি হচ্ছে আল্লাহ্ সংক্রান্ত বিশ্বাস। আমরা ইনশাল্লাহ্ একে একে সেগুলো উল্লেখ করবো:

১)আল্লাহর সাহায্যে বিশ্বাস রেখে আমরা আল্লাহর একত্ববাদ সম্বন্ধে বলি যে – আল্লাহ্ এক, তাঁর কোন অংশীদার নেই।
২)তাঁর মত কিছু নেই।
৩)কোন কিছুই তাঁকে পরিবেষ্টন করতে পারে না।
৪)তিনি ছাড়া কোন উপাস্য নেই।
৫)তিনি অনন্ত, যাঁর কোন শুরু নেই এবং যিনি শেষ পর্যন্ত থাকবেন।
৬)তিনি কখনো ক্ষয়প্রাপ্ত হবেন না বা ধ্বংস হবেন না।
৭)তাঁর ইচ্ছা ছাড়া কিছুই ঘটে না।
৮)কোন কল্পনা তাঁকে ধারণা করতে পারে না এবং কোন জ্ঞান দিয়ে তাঁকে বোঝা যায় না, তিনি ধারণাতীত এবং বোধের অতীত।
৯)যে কোন সৃষ্ট বস্তু থেকে তিনি ভিন্ন।
১০)তিনি জীবন্ত এবং কখনো মৃত্যু বরণ করেন না এবং অন্তহীনভাবে ক্রিয়াশীল – কখনো নিদ্রা যান না।
১১)কোন প্রয়োজন ছাড়াই তিনি সৃষ্টি করেন এবং কোন চেষ্টা ছাড়াই তাঁর সৃষ্টির চাহিদা পূরণ করেন।
১২)তিনি কোন ভয় ছাড়াই মৃত্যু ঘটান এবং অনায়াসে পুনর্জীবন দান করেন। জীবন পুনঃস্থাপন করেন।
১৩)সৃষ্টির পূর্ব থেকেই তাঁর গুণাবলীসহ তাঁর অস্তিত্ব বিদ্যমান। সৃষ্টিকে অস্তিত্বে আনয়ন করা তাঁর গুণাবলীতে এমন কিছু যোগ করে না, যা ছিল না। যেহেতু তিনি অনন্তের পূর্বেও তাঁর গুণাবলী সহ বর্তমান ছিলেন, অশেষ সময়ের মাঝেও তিনি বিদ্যমান থাকবেন।

আপাতত এই ১৩টি পয়েন্ট নিয়ে একটু চিন্তা ভাবনা করুন। ইনশাল্লাহ্ পরবর্তীতে বাকী পয়েন্টগুলোও আপনাদের জন্য আমি তুলে দেবো।

আল্লাহ্ হাফিজ।

[N.B. তথ্যগুলো কারো কারো জন্য এটু রস-কষহীন মনে হতে পারে। তবু বলা আবশ্যক যে, এগুলো ইসলামের একেবারে মৌলিক concept – আমাদের কাছে আনন্দময় না মনে হলেও, এগুলো জানা উচিত। একটু খেয়ার করলেই আমরা বুঝবো যে, এগুলো না জানাতেই আমাদের অনেকেই এটা শিরকপূর্ণ জীবন যাপন করতে করতেই কবরে চলে যাই। আল্লাহ্ আমাদের সবাইকে সেই আগুন থেকে বেঁচে থাকার তৌওফিক্ব দান করুন, যার fuel হবে মানুষ ও পাথর। আমীন!!]

আল্লাহ্ সংক্রান্ত সঠিক বিশ্বাস (বা আক্বীদাহ্)-২

লিখেছেন: ‘ মুসলিম৫৫‘ @ শনিবার, নভেম্বর ৭, ২০০৯ (১১:২২ অপরাহ্ণ)

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
السلام عليكم ورحمة الله و بركاته

এর আগের লেখায় আমরা ইমাম তাহাভীর (রহ.) “আল আক্বীদাহ্ আল তাহাভীয়াহ্” থেকে প্রথম ১৩টি পয়েন্ট তুলে দিয়েছিলাম। আপনাদের স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি যে, “আল আক্বীদাহ্ আল তাহাভীয়াহ্” নামক কাজে, ১০৫ টি পয়েন্টের আকারে, আহলে সুন্নাহ্ ওয়া আল জামা’আহর আক্বীদাহ্ বা ধর্মবিশ্বাস সমূহ লিপিবদ্ধ করা হয়েছে – যার ভিতর প্রথম ২৮টি হচ্ছে purely আল্লাহকে নিয়ে। এর পরেরগুলোতেও আল্লাহর বিভিন্ন গুণাগুণের কথা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, তাই সেগুলো পড়া/জানাও জরুরী। তবে প্রথমে আমরা এই ২৮টি সম্বন্ধে আপনাদের অবহিত করবো ইনশা’আল্লাহ্। ২৮টির বাকী পয়েন্টগুলো হচ্ছে:

১৪)শুধুমাত্র সৃষ্টি করার পরই যে তাঁকে “সৃষ্টিকর্তা” বলা যাবে তা নয়, বা এটাও নয় যে, তিনি সবকিছুর সূচনা করেন বলে তাঁকে সূচনাকারী বলা হয়।
১৫)যখন কোন কিছুর রব হওয়ার ছিল না তখনও তিনি রব ছিলেন, আর যখন কোন সৃষ্টি ছিল না তখনও তিনি সৃষ্টিকর্তা ছিলেন।
১৬)একইভাবে তিনি “মৃতকে জীবনদানকারী” – প্রথম তাদের জীবন দানের পর এবং তাদেরকে জীবনদানের পূর্বেও [তিনি তাই ছিলেন]। তাই সৃষ্টির পূর্বেও তিনি “সৃষ্টিকর্তা” নামের অধিকারী।
১৭)এটা এজন্য যে তাঁর সবকিছু করার ক্ষমতা আছে, প্রতিটি জিনিস তাঁর উপর নির্ভরশীল; সবকিছু তাঁর জন্য করা সহজ, এবং তাঁর কোন কিছুর প্রয়োজন নেই, “তাঁর মত কিছুই নেই এবং তিনি সবকিছু শোনেন সবকিছু দেখেন।” (সূরা শুরা, ৪২:১১)
১৮)তিনি তাঁর জ্ঞানের দ্বারা সৃষ্টি করেছেন।
১৯)তিনি সৃষ্টবস্তুর ভাগ্য নির্ধারণ করেছেন।
২০)তিনি তাদেরকে নির্দিষ্ট জীবনকাল দিয়েছেন।
২১)তাদেরকে সৃষ্টির পূর্বে কিছুই তাঁর কাছে গোপন ছিলনা, এবং সৃষ্টির পূর্বেই তিনি জানতেন তারা কি করবে।
২২)তিনি তাদেরকে আদেশ করেছেন তাঁকে মেনে চলতে এবং নিষেধ করেছেন তাঁকে অমান্য করতে।
২৩)তাঁর হুকুম ও ইচ্ছা অনুসারে সবকিছু হয়, এবং তাঁর ইচ্ছাই পালিত হয়। মানুষের সেই ইচ্ছাই হয়ে থাকে যা তিনি তাদের জন্য ইচ্ছা করেন। তিনি তাদের জন্য যা চান তাই ঘটে এবং যা তিনি চান না তা ঘটে না।
২৪)তাঁর বদান্যতা দ্বারা তিনি যাকে ইচ্ছা হিদায়াত দেন, এবং হেফাজত করেন, এবং ক্ষতি থেকে নিরাপদ রাখেন; এবং তাঁর ন্যায় বিচার থেকে তিনি যাকে খুশী বিপথগামী করেন, এবং তাদেরকে লাঞ্ছিত করেন, এবং কষ্ট দেন।
২৫)প্রত্যেকেই তাঁর ইচ্ছার বশবর্তী/অধীন – হয় তাঁর বদান্যতার অথবা তাঁর ন্যয় বিচারের।
২৬)এ থেকে তিনি মুক্ত যে, কেউ তাঁর বিপরীত লিঙ্গ অথবা সমান হবে।
২৭)কেউ তাঁর সিদ্ধান্ত টলাতে পারে না, বা তাঁর আদেশের অন্যথা করতে পারে না বা তাঁর ক্ষমতার উপর বিজয়ী হতে পারে না।
২৮)আমরা এ সমস্তই বিশ্বাস করি এবং নিশ্চিত যে সবকিছুই তাঁর কাছ থেকে আসে।

আপনাদের কারো কারো মনে হতেই পারে যে, লোকটা কি সব শুকনো জিনিস আমাদের গিলাতে চাচ্ছে – কিন্তু আমি দু’টো কারণে এতসব আপনাদের জানাতে চেষ্টা করলাম:

ক) আমি যে আরেকদিন বেঁচে থাকবো এবং সেই “আরেকদিন” মুসলিম জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারগুলো আপনাদের জানাতে পারবো সে সম্বন্ধে আমি নিশ্চিত নই। সুতরাং যখনই সুযোগ পাওয়া যায়, তখনই একজন মুসলিমের উচিত অপর জনকে জরুরী বিষয়গুলো জানান দেয়া।
খ)এই ব্যাপারগুলো আমিও একদিন প্রথম হয়তো হাই তুলতে তুলতেই শুনেছিলাম, অথচ, এই জ্ঞানই আমার জীবনে অগ্রাধিকার ঠিক করার ব্যাপরে একটা বিশাল পরির্তন নিয়ে আসে- আলহামদুলিল্লাহ্! আমি আশা করবো এভাবেই হয়তো যারা এই লেখায় চোখ বুলাবেন, তাদের জীবনেও কখনো একটা পরিবর্তন আসবে ইনশা’আল্লাহ্! আমীন!!

ফি আমানিল্লাহ্।

আল্লাহ্ সংক্রান্ত সঠিক বিশ্বাস (বা আক্বীদাহ্)-৩

লিখেছেন: ‘ মুসলিম৫৫‘ @ রবিবার, নভেম্বর ৮, ২০০৯ (১০:২৯ পূর্বাহ্ণ)

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
السلام عليكم ورحمة الله و بركاته

আল্লাহ্ সম্বন্ধে আমাদের সঠিক বিশ্বাসগুলো কি কি তা জানাতে বা জানতে এর আগে আমরা “আল আক্বীদাহ্ আল তাহাভীয়া” থেকে ২৮টা পয়েন্ট উল্লেখ করেছি। এভাবে পয়েন্টগুলো উল্লেখ করার বেশ আগে থেকেই আমি চেষ্টা করেছি, আল্লাহ্ সম্বন্ধে সঠিক বিশ্বাস থাকাটা গত গুরুত্বপূর্ণ সে ব্যাপারে আপনাদের সচেতন করতে – যাতে আপনাদের কাছে ব্যাপারটা boring না লাগে – কতটুকু পেরেছি আল্লাহই ভালো জানেন।

“আল আক্বীদাহ্ আল তাহাভীয়া”র মত আক্বীদাহর আরো কিছু বড় কাজ রয়েছে, যেমন, ইবন তাইমিয়্যা (রহ.)-এঁর “আক্বীদাতুল ওয়াসিতিয়্যাহ্” এবং ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-এঁর “ফিক্বহুল আকবার”। তবে এসবের ভিতর “আল আক্বীদাহ্ আল তাহাভীয়া”ই বেশী আলোচিত বলে আমার মনে হয়েছে। শুধু পয়েন্ট থেকে এই কাজের “স্বাদ” পাওয়া কঠিন। তবে এর ব্যাখ্যা, এই সব ব্লগে আলোচনার সুযোগ নেই বলে, পয়েন্ট আকারেও ইনশা’আল্লাহ্ যদি আমরা জানতে পারি, তবে তা হবে মন্দের ভালো।

বহু আলীম “আল আক্বীদাহ্ আল তাহাভীয়া”-র ব্যাখ্যা করেছেন বা লিখেছেন। তার মাঝে প্রায় ৬৫০ বছর আগের, সিরিয়ান স্কলার ইবন আবু ইযয আল হানাফী রচিত ব্যাখ্যাটা বেশ জনপ্রিয়। ব্যক্তিগত ভাবে আমি ঐ ব্যাখ্যাটাই পড়েছি । আপনারা চাইলে ইংরেজীতে ঐ ব্যাখ্যা ডাউনলোড করতে পারেন।

আমি ভাবছি “আল আক্বীদাহ্ আল তাহাভীয়া”র বাকী পয়ন্টেগুলোও পর্যায়ক্রমে আপনাদের জন্য তুলে দেবো ইনশা’আল্লাহ্ – কারণ এর সবটুকু মিলেই আমাদের, মুসলিমদের, সঠিক আক্বীদাহ্ defined হয়েছে:

২৯)এবং আমরা নিশ্চিত যে, মুহাম্মাদ (সা.) তাঁর বাছাই করা, পছন্দনীয় বান্দা এবং তাঁর নির্বাচিত নবী এবং তাঁর রাসূল – যাঁর তিনি সন্তুষ্ট।
৩০)এবং তিনি নবীদের সিলমোহর এবং আল্লাহ-ভীরুদের নেতা এবং রাসূলদের মাঝে সর্বাধিক সম্মানিত এবং রাব্বুল আলামীনের প্রিয়।
৩১)তাঁর পরে নবুয়তের প্রত্যেক দাবীই মিথ্যা ও প্রতারণা।
৩২)তিনিই একমাত্র যাকে সমগ্র জ্বীন ও মানবজাতির কাছে সত্য ও হিদায়াত এবং আলো ও দীপ্তি সহকারে পাঠানো হয়েছে।

আজ এপর্যন্ত থাক। ইনশাল্লাহ্ বাকীগুলোও আপনাদের জন্য পর্যায়ক্রমে তুলে দেবো।

ফি আমানিল্লাহ্!

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *