প্রশ্নঃ মুসাল্লা আর মসজিদের মধ্যে পার্থক্য কি? অনেকে মনে করে থাকেন কাছাকাছি (১-২ কিলোমিটার) মসজিদ থাকলে মুসাল্লাতে জামাতে সলাত পড়া শুদ্ধ হবে না। বিশেষ করে এই ব্যাপারে ঐ হাদিসটি উল্লেখ করা হয় যেখানে রাসুলুল্লাহ সাঃ থেকে নারী ও শিশু না থাকলে ঘরগুলোতে আগুন দেবার ইচ্ছার কথা এসেছে। এ ব্যাপারে সঠিক মতটি জানতে চাই।

উত্তর  দিয়েছেন ডঃ মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ

উত্তরঃ মুসাল্লা বলা হয়ে থাকে যেখানে নিয়মিত সলাত আদায় করা হয়ে থাকে আর মসজিদ বলা হয়ে থাকে যেটা সলাতের জন্য নির্দিষ্ট করা হয়েছে এবং যেখানে নিয়মিত সলাতের জামাত হয়ে থাকে, আযান দেয়া হয়ে থাকে। মূলত এ দুটি শব্দের মধ্যে তেমন কোনো পার্থক্য নেই। ‘আরবী ভাষায় মুসাল্লা শব্দটি প্রয়োগ করা হয়ে থাকে ইদগাহের উপর অর্থাৎ যেখানে ঈদের সলাত আদায় করা হয়ে থাকে। আর পরিভাষায় মসজিদ বলা হয়ে থাকে যেখানে নিয়মিতভাবে সলাত আদায় করা হয়ে থাকে জামাতে। মসজিদ দু ধরনের হতে পারে। যেমনঃ

১. মসজিদুল জামে (যেখানে জুম’আর সলাত আদায় হয়ে থাকে)

২. সাধারণ মসজিদ (যেখানে নিয়মিত আযান দিয়ে পাঁচ ওয়াক্ত সলাত আদায় করা হয়ে থাকে)

এখন আমাদের জানা দরকার যে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদের কোনো সংজ্ঞা দিয়েছেন কিনা। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাদিসের মধ্যে সুস্পষ্টভাবে মসজিদের কোনো সংজ্ঞা আসে নি। বরং আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাস’উদ রাদিয়াল্লাহু তা’আলা ‘আনহু মসজিদের যে পরিচয় দিয়েছেন সেখান থেকে বুঝা যায়, মসজিদ হয়ে থাকে যেখানে সলাত আদায় করার উদ্দেশ্যে আযান দেয়া হয়ে থাকে এবং জামাতে সলাত আদায় করা হয়ে থাকে এটি হচ্ছে মসজিদ। আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাস’উদ রাদি’আল্লাহু তা’আলা ‘আনহু বলেন, “তোমরা এই সলাতগুলো সুন্দর করে আদায় করো যেখান থেকে সলাতের জন্য আযান দেয়া হয়ে থাকে সেখানেই।” এই রেওয়ায়াত থেকে বুঝা যাচ্ছে যদি আযান হয় এবং জাম’আত হয়ে থাকে সেটাই মসজিদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হবে। মসজিদের পরিচয়/তা’রিফ যদি আমরা দেখি তাহলে আমামাদের কাছে আরো স্পষ্ট হবে। বিভিন্ন বর্ণনার মধ্যে মসজিদের যেই তা’রিফ এসেছে “যেই স্থানকে নির্দিষ্ট করা হয়েছে পাঁচ ওয়াক্ত সলাত আদায় করার জন্য এবং যেখানে আযান দেয়া হয়ে থাকে সেটাই মসজিদ।” এই অর্থে যদি কোথাও কোনো মসজিদ নির্দিষ্ট করা হয়ে থাকে তাহলে সেটি মসজিদই হবে যদিও সেটিকে মুসাল্লা নাম দেওয়া হয় না কেন এবং সেখানে সলাত আদায় করা বৈধ। এখানে যদি কেউ জামাতে সলাত আদায় করে তাহলে তার সলাত আদায় হবে না এ কথাটি শুদ্ধ নয়। কিন্তু মসজিদকে উপেক্ষা করে যদি কেউ ঘরে জামাত আদায় করে থাকে অথবা যেখানে সলাতের আযান দেয়া হয় না বা সলাতের জন্য আহবান করা হয় না বা সলাত নিয়মিত আদায় করা হয় না বা সলাতের জন্য যে স্থানকে নির্দিষ্ট করা হয়নি শুধুমাত্র লোকেরা একত্রিত হয়েছে এমনস্থানে যদি কেউ সলাত আদায় করে থাকে এমতাবস্থায় যে, সেখানে কাছে মসজিদ আছে তাহলে সেখানে অধিকাংশ ‘উলামায়ে কিরামের বক্তব্য অনুযায়ী যেমন শাইখ আব্দুল আযীয আব্দুল্লাহ্ বিন বায, সালেহ আল উসাইমীনসহ অনেকের মতে তার সলাত শুদ্ধ হবে না।

ঘরে আগুন দেয়ার বিষয়টি যেটি আপনি উল্লেখ করেছেন সেটি দলিল হিসেবে প্রযোজ্য হবে না। এই হাদিসে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম যারা ইচ্ছে করে সলাত আদায় করতো না বা তাখাল্লুফ করতো এবং ঘরে বসে থাকতো তাদের দিকে ইঙ্গিত করেছেন। হাদিসের বিষয়গুলো আমাদের ভালোভাবে অনুধাবন করতে হবে। যদি কোথাও মুসাল্লা নির্ধারিত হয়ে থাকে আর সেখানে নিয়মিত আযান এবং ইকামত হয়ে থাকে সেটি দুই ওয়াক্তের হতে পারে, চার ওয়াক্তের হতে পারে তাহলে এটি মসজিদের হুকুমের মধ্যেই অন্তর্ভুক্ত হবে। পার্থক্য এতটুকুই যে মসজিদের মধ্যে নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্তের আযান দেয়া হয়ে থাকে এবং জুম’আর সলাত আদায় হয়ে থাকে কিন্তু মুসাল্লায় জুম’আর সলাত আদায় করা হয়না বা নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্তের সলাত আদায় করা হয় না। কিন্তু হুকুমের দিক থেকে একই। তাই আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদিসের মধ্যেও এভাবে বলেছেন,
وجعلت لي الارض مسجدا

“আর আমার জন্য গোটা পৃথিবীকেই আল্লাহ্‌ তা’আলা মসজিদে পরিণত করে দিয়েছেন।” এখানে মসজিদের ব্যাপারে একটি কমন বক্তব্য আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম দিয়েছেন যাতে করে আমরা বুঝতে পারি যে তিনি প্রত্যেকটি যায়গাতেই আদায়কৃত সলাতকে শুদ্ধ ঘোষণা করে দিয়েছেন। কিন্তু মসজিদকে তাখসীস করা হয়ে অথবা কোনো স্থানকে নির্দিষ্ট করা হয়ে থাকে ইবাদতের সুবিধার জন্য এবং সেখান থেকে আযান দেয়ার মাধ্যমে লোকদেরকে জানিয়ে দেয়া হয় যে এটি একটি মসজিদ এবং এখানে আযান হয়ে থাকে। তাই মুসাল্লার মধ্যে যদি আযান হয় এবং নিয়মিত সলাত আদায় হয়ে থাকে তাহলে সলাত আদায় হয়ে যাবে এবং এটি ঐ ব্যক্তির মতো নয় যে ইচ্ছাকৃতভাবে সলাত পরিহার করে ব্যক্তিগতভাবে সলাত আদায় করলো। জাযাকুমুল্লাহু খাইরান।

প্রশ্নঃ মুসাল্লায় প্রবেশ করলে কি তাহিয়্যাতুল মসজিদ পড়তে হবে?

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *