الحمد لله رب العالمين والصلاة والسلام على النبي الأمين وعلى آله وصحبه اجمعين

প্রশ্নঃ বিভিন্ন পশুপাখি দিয়ে খেলা দেখিয়ে অর্থ উপার্জন জায়েয কিনা?

উত্তর দিয়েছেন ডঃ মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ

উত্তরঃ এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। প্রথমত, খেলা দেখানোটা যদি বৈধ হয়ে থাকে তাহলে এর মাধ্যমে উপার্জনও বৈধ হবে। দ্বিতীয়ত, বিভিন্ন পশুপাখি যেমন কবুতর, সাপ, বানর, টিয়া ইত্যাদির মাধ্যমে খেলা দেখানো ইসলামী শরিয়তের মধ্যে কতটুকু জায়েয এ বিষয়ে ‘আলেমদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। তবে বিশুদ্ধ বক্তব্য হচ্ছে এটি দুটি শর্তে জায়েযঃ

১. এই খেলা দেখানো বা খেলার কাজে লিপ্ত হওয়া যেন কোনোভাবেই আল্লাহ্ রব্বুল আলামীনের যিকির এবং সালাত থেকে বিরত না করে।

২. কোনোভাবেই যেন এর মধ্যে জুয়ার কোনো সম্পৃক্ততা না থাকে। যদি কোনো কারণে জুয়া সম্পৃক্ততা এর মধ্যে থেকে যায় তাহলে এটি হারাম হবে এতে কোনো সন্দেহ নেই।

এমনিতেই শুধুমাত্র বিনোদনের জন্য অথবা শুধুমাত্র সৌন্দর্যের জন্য যদি খেলা দেখানো হয়ে থাকে তাহলে এটি নাজায়েয নয় বরং জায়েয এবং এটিই বিশুদ্ধ বক্তব্য। আমরা দেখতে পাই কুরআনে কারীমের সূরা আন নাহলের ৮ নাম্বার আয়াতের মধ্যে আল্লাহ্‌ রব্বুল আলামীন বলেন, والخيل والبغال والحمير لتركبوها وزينة “আল্লাহ্‌ রব্বুল আলামীন উট, খচ্চর এবং গাধা এগুলোকে আমাদের জন্য বাহন হিসেবে করেছেন এবং সৌন্দর্যের জন্য।” এতে বুঝা যায় যে যদি এর মাধ্যমে কেউ সৌন্দর্য গ্রহণ করতে চায় বা বিনোদন গ্রহণ করতে চায় তবে সেটি জায়েয। এ আয়াতের তাফসীরের মধ্যে আহলুত তাফসীরদের মধ্যে কেউ কেউ এ কথা বলেছেন যে, যীনাহ্ এর সৌন্দর্যের মধ্যে এটিও একটি যে এগুলোর মাধ্যমে মানুষ বিভিন্ন ধরণের বিনোদনমূলক কাজও করতে পারবে এবং এটিও সৌন্দর্যের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। আমরা সূরা আল আম্বিয়া এর ৭৮ নং আয়াতেও দেখতে পাই যে, আল্লাহ্‌ তা’আলা ইরশাদ করেছেন, وسخرنا مع داود الجبال يسبحن والطير “দাউদের (আ.) এর সাথে আমি পাহাড়াসমূহকে তার অনুগত করে দিয়েছি এগুলো দাউদ (আ.) এর সাথে সাথে আল্লাহ্‌ রব্বুল আলামীনের পবিত্রতা এবং স্তুতি ঘোষণা করছে এবং পাখিগুলোও।” এখান থেকে বুঝা যায় মূলত পাখি অথবা অন্য যেসমস্ত প্রাণীগুলো আছে সেগুলোকে ব্যবহার করা বিভিন্ন বৈধ কাজে এটি ইসলামী শরিয়তের মধ্যে জায়েয রয়েছে যেহেতু আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা অনুমতি দিয়েছেন। আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে একটি হাদিসে আমরা পাই যে, আনাস (রা.) এর ছোটভাইকে উদ্দেশ্য করে রসূলুল্লাহ্ (সা.) বলেছিলেন যে, يا ابا عمير ما فعل النغير ؟ “হে আবু উমায়ের তোমার নুগাইর (চড়ুই পাখির মতোই তবে একটু ছোট ও ঠোঁট লাল) পাখির খবর কি?” [সহিহ বুখারি ৫৮৫০] এখান থেকে হাফিয ইবনে হাজার আসক্বালানী (রহ.) সহ একদল আহলুল হাদিস মুহাদ্দিসীনগণ উল্লেখ করেছেন যে, এর মাধ্যমে বুঝা যায়, পশুপাখির মাধ্যমে খেলাধুলা করা এগুলো জায়েয এবং যেহেতু নাবী স. এর সময়ে এ ধরণের খেলাধুলা হয়েছে এবং তিনি এই হাদিসের মাধ্যমে সেটি অনুমোদন দিয়েছেন। উসমান ইবনে আফফান (রা.) এর সময়েও কবুতরের মাধ্যমে খেলার বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে এবং এ খেলার মধ্যে লোকেরা এমনভাবে মেতে উঠেছিল যে শেষ পর্যন্ত সলাত এবং আল্লাহর যিকির থেকে গাফিল হয়ে যাচ্ছিল তখন তিনি নির্দেশ দিলেন এ খেলা বন্ধ করার জন্য এবং এ কবুতরকে জবেহ করে দেয়ার জন্য। এখান থেকে বুঝা যায় যে যদি কোনো খেলা শরিয়তের যে বিধিবিধান রয়েছে সেটি অনুসরণ করে করা হয় তাহলে সেটি জায়েয আর এই জায়েয কাজের মাধ্যমে যদি কেউ উপার্জন করে থাকেন তাহলে তার উপার্জনটুকুও হালাল হবে এটিই বিশুদ্ধ বক্তব্য। ওয়াল্লাহু আ’লাম।

والسلام عليكم ورحمة الله و بركاته

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *