الحمد لله رب العالمين والصلاة والسلام على النبي الأمين وعلى آله وصحبه اجمعين

প্রশ্নঃ হাদিসে আওয়াল ওয়াক্তে সলাত আদায়ের কথা বলা হয়েছে কিন্তু আমাদের সমাজে সলাতগুলোকে ডিলে করে আদায় করা হয়ে থাকে বিশেষ করে আসরের সলাত। এর কারণ কি? আর আসরের সলাত কখন আদায় করলে আমরা সঠিক সময়ে সলাত আদায় করতে পারবো?

উত্তর দিয়েছেন ডঃ মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ

উত্তরঃ জী আপনি ঠিকই বলেছেন। রসূলুল্লাহ্ ﷺ কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, اي العمل احب الى الله قال الصلاة على وقتها কোন ‘আমালটি আল্লাহর নিকট সবচেয়ে উত্তম? প্রশ্নের উত্তরে রসূলুল্লাহ্ ﷺ বলেন “অভিষ্ট সময়ের মধ্যে সলাত আদায় করা।” [সহিহ বুখারি ৫২৭, সহিহ মুসলিম ৮৫]

এখান থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, সলাতের জন্য যে ওয়াক্ত নির্ধারিত আছে তখনই সলাত আদায় করতে হবে। এ হাদিসের ব্যাখ্যার মধ্যে ইমাম নববী (রহ.) বলেন, আস সলাতু ‘আলা ওয়াক্তিহা এর অর্থ হচ্ছে, যে ওয়াক্ত বান্দার কাছে চাওয়া হয়েছে সলাত আদায় করার জন্য সে ওয়াক্তেই সলাত আদায় করা। আর সেই ওয়াক্তটা রসূলুল্লাহ্ ﷺ বলে দিয়েছেন যে কখন সলাতের অভিষ্ট ওয়াক্ত হবে। শাইখ মুহাম্মাদ ইবনে সালেহ আল উসাইমান (রহ.) হাদিসে একথা বলা হয়নি যে, সলাতের ওয়াক্তের মধ্যে সলাত আদায় করা। বরং বলা হয়েছে মাতলুব বা কাংক্ষিত সময় সলাত আদায় করা তাই রসূলুল্লাহ্ ﷺ এর ‘আমাল থেকে যায় তিনি কখনো তা’খির করেছেন আবার কখনো একেবারে আওয়াল ওয়াক্তে আদায় করেছেন। তবে ইশার সলাতকে তা’খির করার কথা রসূলুল্লাহ্ ﷺ বলেছেন। সুতরাং কারো যদি সুযোগ থাকে বা তিনি যদি চান তাহলে তিনি সলাতুল ইশাকে তা’খির করতে পারবেন বা দেরি করে আদায় করতে পারবেন। প্রচন্ড গরমের সময়ও রসূলুল্লাহ্ ﷺ যোহরের সলাতকে তা’খির করতে বলেছেন। আর বাকি সলাতগুলো নাবী ﷺ এর হাদী অনুযায়ী বা নির্দেশনা অনুযায়ী সময়মত আদায় করাটাই মূলত বিধান। তাই আওয়াল ওয়াক্তে সলাত পড়াটাই উত্তম এ ব্যাপারে কোনো ‘আলেমের দ্বিমত নেই। কিন্তু কেউ যদি কোনো কারণে তা’খির বা দেরি করে আর সেটা যদি সলাতের যে নির্ধারিত ওয়াক্ত রয়েছে সে ওয়াক্তের মধ্যে হয়ে থাকে তাহলে তার সলাত হয়ে যাবে এবং এটি তার জন্য জায়েয। এ ব্যাপারেও ‘আলেমদের কোনো দ্বিমত নেই। কিন্তু তিনি উত্তম কাজটি করতে পারেন নি।

যোহরের সলাতের ওয়াক্তের মধ্যে ‘আলেমদের দ্বিমত রয়েছে। ইমাম আবু হানিফা (রহ.) এর মতে ২ মিসেল পর্যন্ত যোহরের সলাতের ওয়াক্ত থাকে; ২ মিসেলের পরপরই আসরের সলাতের ওয়াক্ত শুরু হয়। যদিও এই মর্মে সুস্পষ্ট কোনো সহিহ হাদিস পাওয়া যায়নি এবং এটি একটি ইজতিহাদী বিষয়। এই কারণেই মূলত একদল লোক আসরের সলাতকে দেরিতে অর্থাৎ ২ মিসেলের পরে আদায় করে থাকেন। ১ মিসেল বলা হয়ে থাকে কোনো বস্তুর ছায়া তার সমপরিমাণ হওয়া আর দুই মিসেল বলা হয়ে থাকে কোনো বস্তুর ছায়া তার দ্বিগুণ হওয়াকে।

কিন্তু আমরা যদি রসূলুল্লাহ্ ﷺ এর হাদিসগুলো একসাথ করে দেখি তাহলে আমাদের কাছে স্পষ্ট হবে যে, সলাত আদায়ের ক্ষেত্রে অর্থাৎ যোহরের সলাতের ওয়াক্ত মূলত এক মিসেল পর্যন্ত পরিপূর্ণ থাকে এবং এক মিসেল শেষ হওয়ার পরপরই আসরের ওয়াক্ত শুরু হয়ে যায়। এটাই অধিকাংশ উলামায়ে কেরামের বক্তব্য এমনকি হানাফি মাযহাবের দুইজন শ্রেষ্ঠ ‘আলেম ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে হাসান আশ শাইবানী (রহ.) ও ইমাম আবু ইউসূফ (রহ.) এ দুজনও এ মতটাকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে এটাই স্পষ্ট হয় যে, এই বক্তব্যটাই মূলত দলিলের দিক থেকে শক্তিশালী। আর রসূলুল্লাহ্ ﷺ কখনো আসরের সলাতকে তা’খির করতে বলেননি এটাও আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। তবে কোনো কারণে যদি কেউ ডিলে করে থাকেন অথবা ইজতিহাদের কারণে যদি ডিলে করে থাকেন এতে তাদের সলাত হয়ে যাবে। কিন্তু উত্তম হচ্ছে আউয়াল ওয়াক্তে সলাত আদায় করা। আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা আমাদেরকে বিষয়টি উপলব্ধি করার তৌফিক দান করুন। আমীন।

والسلام عليكم ورحمة الله و بركاته

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *