প্রশ্নঃ আপনি যখন অসুস্থ হয়ে পড়েন তখন এক ভাই দু’আ চেয়ে একটি পোস্ট দিয়েছেন এবং আমি সেটি শেয়ার করেছি এটা কি সঠিক হয়েছে?

ব্যস্ততার কারণে সলাতের পর যেই আযকারগুলো রয়েছে সেগুলো বসে আদায় করা অনেক সময় কঠিন হয়ে যায়। সেগুলো কাজের মধ্যে অথবা দাঁড়িয়ে আদায় করা ঠিক হবে কি?

উত্তর  দিয়েছেন ডঃ মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ

উত্তরঃ কোনো সন্দেহ নেই আপনি দু’আর জন্য যে কাজটি করেছেন অর্থাৎ আমার জন্য দু’আ করতে বলেছেন এটি একটি সাওয়াবের কাজ। আমি আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ। আমি আল্লাহ্‌ রব্বুল ‘আলামীনের কাছে অত্যন্ত বিনীতভাবে দু’আ করছি আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা যেন আপনার এই কাজটুকু কবুল করেন এবং আল্লাহ্‌ রব্বুল ‘আলামীন যেন মেহেরবানী করে আমাকে ক্ষমা করেন এবং আমাকে সুস্থ করে দেন। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদিসের মধ্যে যেটি ইরশাদ করেছেন সেটি হচ্ছে,

মুসলিম ভাইয়ের জন্য তার অনুপস্থিতিতি তার জন্য দু’আ করাটা হচ্ছে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য দু’আ। তাই এই কাজটি যেহেতু আপনি করেছেন আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীন অবশ্যই এটি গ্রহণ করবেন। এতে আলহামদুলিল্লাহ্‌ আমরা যে পরস্পর পরস্পরকে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ভালোবেসে থাকি এর একটি প্রমাণ পাওয়া যায়। আল্লাহ্‌ তা’আলা যেন আমাদের এই ভালোবাসা কিয়ামতের দিন পর্যন্ত অর্থাৎ জান্নাতে যাওয়া পর্যন্ত অটুট রাখেন, দ্বীনের উপর আমাদের অবিচল রাখেন আমরা আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীনের কাছে সেই ফরিয়াদ করছি।

এরপর আপনি জানতে চেয়েছেন যে, ব্যস্ততার কারণে অনেক সময় সলাতের পরের আযকারগুলো বসে আদায় করা কঠিন হয়ে যায় কাজের মধ্যেই আদায় করতে হয় অর্থাৎ কাজ করতে করতে। জী, আযকারসমূহ বসে আদায় করা শর্ত নয় তবে আদব হচ্ছে বসে আদায় করা। কিন্তু ব্যস্ততার কারণে কোনো ভাই যদি দু’আগুলো দাঁড়িয়ে আদায় করে থাকেন অথবা কাজের ফাঁকেফাঁকে তার সুযোগমতো আদায় করেন তাহলে এটি তার জন্য জায়েয। আযকার, দু’আ, কুরআন তিলাওয়াতের জন্য আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা সুনির্দিষ্ট কোনো ধরণ অথবা ফরমেট নির্ধারণ করে দেন নি। আপনি যেভাবে খুশি সেভাবে তা আদায় করতে পারেন। বরং আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা প্রশংসা করেছেন ঈমানদার বান্দাদের যারা তাকে স্মরণ করেন,

الَّذِينَ يَذْكُرُونَ اللَّهَ قِيَامًا وَقُعُودًا وَعَلَى جُنُوبِهِمْ

“যারা আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীনের যিকির করে থাকেন দাঁড়ানো অবস্থায়, বসা অবস্থায় এবং শোয়া অবস্থায়।” (সূরা আলে ‘ইমরান ১৯১)

সুতরাং আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীন এটি অনুমোদন দিয়েছেন। তাই দু’আর জন্য/কুরআন তিলাওয়াতের জন্য সুনির্দিষ্ট হাইয়াতকে বাধ্যতামূলক করে দেয়া হয়নি। তবে প্রত্যেকটি ‘ইবাদাতের জন্য কিছু আদব রয়েছে। অর্থাৎ এগুলো আদবের সাথে আদায় করতে চাইলে আদব রক্ষা করাটাই উচিৎ। বিশেষ করে ফরয সলাতের পর যেই আযকারগুলো রয়েছে সেগুলো সলাতের পর বসে আদায় করাটাই মূলত আদব। কিন্তু কেউ যদি ব্যস্ততার কারণে এভাবে আদায় করতে না পারেন তাহলে যেভাবে সম্ভব অর্থাৎ যেভাবে করলে তার জন্য সহজ সেভাবে আদায় করতে পারবেন। এরপর যে বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সেটি হচ্ছে এ সমস্ত যিকিরের জন্য মূলত আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম শর্ত করে দেননি যে এগুলো এভাবেই আদায় করতে হবে। তার মধ্যে কুরআন তিলাওয়াত, কুরআনের দু’আগুলো আপনি যে অবস্থায় পারেন পড়তে পারবেন। অথবা হাদিসে যেই দু’আগুলো রয়েছে যেমন সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী সুবহানাল্লাহিল ‘আযীম। আপনি যদি দেখেন যে আপনি সামান্য সুযোগ পেয়ে গেছেন আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীনের এই যিকিরটুকু করার জন্য আপনি করতে পারবেন। কোনো অসুবিধে নেই। আপনার কাজের ফাঁকেফাঁকে এই যিকিরগুলো করতে পারবেন, কাজের ফাঁকেফাঁকে কুরআন তিলাওয়াত করতে পারবেন, মুখস্থ যে আয়াতগুলো আছে সেগুলো তিলাওয়াত করতে পারবেন। এর জন্য আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীন অবশ্যই আপনাকে উত্তম প্রতিদান দান করবেন। জাযাকুমুল্লাহু খাইরান।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *