প্রশ্নঃ দুনিয়ার অধিকাংশ বস্তু বাঁধা দেয় আল্লাহকে স্মরন করতে। কিভাবে আমরা এই অবস্থায় আল্লাহর দিকে বেশী মনোযোগ দিব?

উত্তর  দিয়েছেন ডঃ মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ

উত্তরঃ ধন্যবাদ, খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীন দুনিয়ার যেসমস্ত সামগ্রী সৃষ্টি করেছেন সেগুলো আল্লাহর বান্দাদেরকে ব্যবহার করার জন্য। আল্লাহর বান্দা যেন এগুলো থেকে উপকৃত হয় এজন্য মূলত আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা এগুলোকে সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু এগুলোর প্রতি ধাবিত হয়ে যাওয়া বা এগুলোর ভালোবাসায় মত্ত হয়ে যাওয়ার জন্য নয়। মানুষের নফসের মধ্যে মূলত এই বস্তুগুলোর প্রতি একটি আকর্ষণ রয়েছে। সে আকর্ষণের কারণেই মূলত দেখা যায় মানব আত্মা/নফস এগুলোর দিকে ধাবিত হয় এবং এগুলোর প্রতি খুব বেশি আকৃষ্ট হয় এবং এগুলোর ভালোবাসাকেই মনে করে যে এগুলোই তার পার্থিব জীবনের জন্য/গোটা জীবনের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। তাই সে এখানে মত্ত হয়ে যায় এবং এটিকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে। এটি একটি ভুল কাজ এবং ভুল চিন্তাধারা।

আল্লাহর দিকে মনযোগী হওয়ার জন্য অর্থাৎ আল্লাহর বান্দাগণ যখন আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীনের দিকে নিজেকে ধাবিত করবেন ও মনোনিবেশ করবেন সেক্ষেত্রে নিচের বিষয়গুলোর দিকে আমাদের খেয়াল রাখতে হবেঃ-

১. আল্লাহর ভয়ঃ আল্লাহ্‌ তা’আলার আযাব এবং শাস্তির জন্য আপনার অন্তরে ভয় সঞ্চার হতে হবে। ভয় সঞ্চার হলেই মূলত আপনি আল্লাহর দিকে দৌড়াবেন এবং একটি নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে চাইবেন। যেমন, আপনার সামনে যদি একটি বাঘ এসে যায় অথবা আপনার সামনে কোনো একটা হিংস্র প্রাণী এসে যায় আপনি তখন সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে, সর্বোচ্চ মনোযোগ দিয়ে, সর্বোচ্চ সাধনা দিয়ে চেষ্টা করবেন একটি নিরাপদ স্থানে যাওয়ার জন্য। তাই আপনি যখন মনে করবেন যে আপনি একটি ভীতিপূর্ণ যায়গায় রয়েছেন/আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীনের আযাবের মুখোমুখি রয়েছেন যেখানে আপনি আশংকা করছেন যে আল্লাহর আযাব আপনার মুখোমুখি হয়ে যেতে পারে তখন আপনার অন্তরে আল্লাহ তা’আলার ভয় আসবে। আল্লাহর ভয় যতক্ষণ পর্যন্ত আপনার অন্তরে ইন্সটল করতে না পারবেন ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহর দিকে ধাবিত হতে পারবেন না, আল্লাহর যিকিরের দিকে ধাবিত হতে পারবেন না, আল্লাহর ইবাদতের দিকে নিজেকে মনোযোগী করতে পারবেন না। তাই অন্তরের ভিতর আল্লাহর ভয়টুকু পরিপূর্ণরূপে আসতে হবে।

২. তাক্বওয়াঃ আপনার প্রত্যেকটি কাজের মধ্যে আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীনের তাক্বওয়া থাকতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত আপনার অন্তর আল্লাহ্‌ তা’আলার তাক্বওয়া দিয়ে পরিপূর্ণ না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত অপরাধের ব্যাপারটা আপনার কাছে খুব সহজ মনে হবে। তখন আপনি মনে করবেন যে অপরাধ করা এবং না করার পিছনে তেমন কোনো পার্থক্য আপনি দেখতে পাবেন না। কিন্তু যখন আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীনের তাক্বওয়া দিয়ে আপনার অন্তর পরিপূর্ণ হয়ে যাবে তখন আপনি সামান্যতম অপরাধ ও অবাধ্যতাকেও মনে করবেন যে আমি অনেক বড় অপরাধী হয়ে যাচ্ছি। সেক্ষেত্রে আপনি সত্যিকার অর্থে আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীনের দিকে মনোযোগী হতে পারবেন।

৩. মৃত্যুকে একেবারে নিকটে মনে করাঃ আপনি মনে করবেন মৃত্যু আমার কাছে এবং খুবই নিকটে। এটি মনে করা খুবই স্বাভাবিক এবং সাধারণ। কারণ আমরা কেউই জানি না আমার মৃত্য কখন হবে। হতে পারে আমার মৃত্যু আগামীকাল হবে, হতে পারে আমার মৃত্যু এখনি হয়ে যাবে। যেকোনো মুহূর্তে আমার মৃত্যু হয়ে যেতে পারে। এমনও হতে পারে আমি ঘুমাচ্ছি তখনি আমার মৃত্যু হয়ে যাবে। এই যে অবস্থা এই অবস্থাটুকু যখন হবে তখন আমরা আমাদের মনোযোগকে এবং আমাদের প্রচেষ্টাকে আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীনের দিকে সর্বোচ্চ চালাতে পারবো। মৃত্যকে বেশি বেশি স্মরণ করলে আল্লাহর বান্দাদের অন্তর বিগলিত হয় এবং আল্লাহর দিকে ধাবিত হয়। এজন্য আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা আমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন,

ففروا الى الله

তোমরা আল্লাহর দিকে ধাবিত হও/দৌড়াও/এগিয়ে যাও। আল ফিরার বলা হয়ে থাকে কোনো একটা ভয়ভীতি থেকে, কোনো একটা আশংকাজনক অবস্থা থেকে, জটিল পরিস্থিতি থেকে নিরাপদ স্থানে ধাবিত হওয়ার নাম মূলত আল ফিরার। আর আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীন মূলত আল্লাহর দিকে ধাবিত হওয়া, আল্লাহর দিকে মনোযোগী হওয়া এবং আল্লাহর এই ইবাদতের দিকে অগ্রসর হওয়াকে আল ফিরার দিয়ে তা’বির,বর্ণনা ও আখ্যায়িত করেছেন। এ থেকে বুঝা যায় আল্লাহর বান্দাগণ শুধুমাত্র আল্লাহর কাছে আসতে পারলেই নিরাপদ স্থানে আসতে পারবেন। আল্লাহ্‌ তা’আলার কাছে যখন কোনো বান্দা প্রত্যাবর্তন করবে, ফিরে আসবে এবং আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার আশ্রয়ে যখন কোনো বান্দা আশ্রিত হবে তখনই বান্দা সত্যিকার নিরাপদ স্থানে এসে যাবে। এখানে আর কেউ বান্দাকে বিপদাপন্ন করতে পারবে না অথবা আশংকায় ফেলতে পারবে না। এজন্য আমাদেরকে সতর্ক থাকতে হবে।

৪. তওবাঃ যদি বান্দার অন্তরে কোনো অপরাধ বা অন্যায়ের পর এই উপলব্ধি আসে যে আমাকে অবশ্যই তওবা করতে হবে। কারণ অপরাধের পর বা অন্যায়ের পর আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার কথা ছিল আমাকে শাস্তি বা আযাব দেয়ার। যেহেতু তিনি আমাকে আযাব দেননি, যেহেতু আমাকে শাস্তি দেননি, যেহেতু আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীন তার ক্রোধ এর কারণে তিনি আমার উপর কোনোধরনের সতর্কতা সংকেত অবতীর্ণ করেন নি এর অর্থ হচ্ছে আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীন আমাকে অবকাশ দিয়েছেন বা সুযোগ দিয়েছেন যাতে করি আমি আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীনের কাছে প্রত্যাবর্তন করতে পারি। তাই এ সুযোগটুকু আমি কাজে লাগাই। তাই তওবার মাধ্যমে আমরা আল্লাহর দিকে ফিরে আসি। আব্দুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন,

فروا الى الله بالتوبة

“তোমরা তওবার মাধ্যমে আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীনের কাছে ফিরে আসো।” এটি তোমাদের জন্য অবকাশ বা সুযোগ সেটিকে তোমরা কাজে লাগাও। অন্যথায় যে পাপের কাজে লিপ্ত রয়েছে, আল্লাহর অবাধ্যতায় লিপ্ত রয়েছে আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীন ইচ্ছে করলেই তাদেরকে আযাব দিয়ে ধ্বংস করে দিতে পারেন যেভাবে তিনি পূর্ববর্তী সম্প্রদায়কে ধ্বংস করেছেন।

এই উপলব্ধিগুলো যদি আমাদের অন্তরের মধ্যে আসে তাহলে আমরা সত্যিকার অর্থে আল্লাহ্‌ তা’আলার দিকে মনোযোগী হতে পারবো এবং আল্লাহ্‌ তা’আলার স্মরণ ও ইবাদতের দিকে আমরা অগ্রসর হতে পারবো। আল্লাহ্ তা’আলা আমাদের তৌফিক দান করুন। আমীন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *