প্রশ্নঃ একজন ইমাম কি একজন মুয়াজ্জিন এর ভূমিকাও পালন করতে পারবেন? কিভাবে একজন ইমাম দুটোরই ভূমিকা পালন করতে পারবেন? এ ব্যাপারে কি কোনো দলিল আছে?

উত্তর  দিয়েছেন ডঃ মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ

উত্তরঃ এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মাস’আলা। এ বিষয়ে সঠিক বক্তব্য হচ্ছে মসজিদের ইমাম এবং মুয়াজ্জিন যদি একজন হয়ে থাকেন সেটি আর্থিক কারণে হতে পারে অথবা মসজিদ পরিচালনার ক্ষেত্রে লোকের অভাব থাকতে পারে অথবা যেই পর্যায়ের যোগ্য লোক থাকার কথা সেটি না থাকলেও এমনটি হতে পারে। এক্ষেত্রে যদি একজন ব্যক্তিকে আযান এবং ইকামতের দায়িত্ব দেয়া হয়ে থাকে তাহলে এটি সমস্ত ইমামের ঐক্যমতে জায়েয রয়েছে। ইমাম শারবিনি (রহ.) মুগনি আল মুহতাজের মধ্যে এটি উল্লেখ করেছেন যে এ কাজটি জায়েয যদি কোনো কারণে ইমাম এবং মুয়াজ্জিন দুজন না হয়ে একজন হয়ে থাকেন। এ বিষয়ে খুব সুন্দর আলোচনা করেছেন ইমাম নববী (রহ.) আল মাজমু শাহরুল মুয়াযযাব এর মধ্যে। তিনি বলেন, “মুসলিম উম্মাহর সমস্ত মুসলিমগণ এ ব্যাপারে একমত হয়েছেন যে মুয়াজ্জিন ইমাম হতে পারবেন এবং এ কাজটি মুস্তাহাব বা উত্তম।” এটির দলিল হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন হাওয়ী এর লেখক ইমাম মাওয়ারদি (রহ.) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন “আযান এবং ইকামত দুটোর মধ্যেই মূলত ফযিলত রয়েছে।” সুতরাং কেউ যদি আযান, ইকামত এবং ইমামত এই তিনটিকে তিনি একত্রিত করেন এটি তার জন্য উত্তম। কারণ প্রত্যেকটি কাজই মূলত আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীনের ত্ব’আত বা আনুগত্যের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। যে আনুগত্যের মাধ্যমে আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীনের নৈকট্য এবং সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়। তাই এই কাজগুলো যদি একজন করে থাকেন তাহলে এটি তার জন্য মুস্তাহাব হবে এবং তিনি এটি করতে পারবেন। ইসলাম ওয়েব এর ১৯৪৬৩ নাম্বার ফাতাওয়ার মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে যে এ কাজটি মূলত জায়েয এটি ‘আলেমদের ইজমা/ঐক্যমতে সাব্যস্ত হয়েছে। তাই ‘আলেমদের ঐক্যমতে কোনো ব্যক্তি যদি আযান, ইকামত দিয়ে থাকেন তাহলে তিনি ইমামতিও করতে পারবেন।

এরপর যে মাস’আলাটি এখানে গুরুত্বপূর্ণ সেটি হচ্ছে যিনি আযান দিবেন উত্তম হচ্ছে তিনিই ইকামত দিবেন। তাই আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিলাল ইবনে রাবাহ রাদি’আল্লাহু আনহুকে উল্লেখ করে বলেছিলেন,
اقم يا بلال

“হে বিলাল তুমি ইকামত দাও।” যেহেতু বিলাল রাদি’আল্লাহু তা’আলা আনহু আযান দিয়েছেন। তাই তিনি এটি পছন্দ করেই বিলালকে (রা.) ইকামত দিতে বলেছেন। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সময়ে মুয়াজ্জিন (বিলাল, আব্দুল্লাহ্ ইবনে উম্মে মমাকতূম (রা.)) সুনির্দিষ্ট ছিল এবং তিনি ইমামতি করতেন। এখানে আরেকটি বিষয় আলোচনায় আসতে পারে সেটি হচ্ছে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাহাবী আবু বকর, উমর, ‘উসমান, ‘আলী তারা কখনো আযান দেননি বরং ইমামতি করেছেন; তারা চাইলে আযান দিতে পারতেন। এর কারণ ফাতাওয়া ইসলাম ওয়েবের মধ্যে বলেছেন যেহেতু আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবায়ে কিরাম (আবু বকর, উমার, উসমান, আলী) (রা.) যেহেতু বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত ছিলেন তাই তারা শুধুমাত্র ইমামতের এই দায়িত্বটুকু নিয়েছেন, মুয়াজ্জিন এর দায়িত্বটুকু তারা পালন করতে পারেন নি; এর জন্য অন্যদেরকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। কিন্তু সালাফে স্বলেহীনের অনেকের ‘আমলের মাধ্যমে এটি সাব্যস্ত হয়েছে যে তাদের অনেকেই আযান এবং ইমামতকে একসাথ করেছেন। বিভিন্ন বর্ণনার মাধ্যমে পাওয়া যায় ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (রহ.) তিনি আযান দিয়েছেন এবং ইমামতের মধ্যেও তিনি অংশগ্রহণ করেছেন। আর আযান যিনি দিবেন তার ইকামত দেয়ার বিষয়টি মুস্তাহাব। তবে যদি মুয়াজ্জিন অনুমতি দেন তাহলে যেকোনো ব্যক্তির জন্য এটি জায়েয রয়েছে যে তিনি মুয়াজ্জিন এর অনুমতি সাপেক্ষে ইকামত দিতে পারবেন। এক্ষেত্রে কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা নেই। সুতরাং, একাজগুলোকে মাকরূহ বা অপছন্দনীয় বলার কোনো সুযোগ নেই যেহেতু প্রত্যেকটি কাজই মর্যাদাপূর্ণ এবং ফযিলতপূর্ণ। তবে ইমাম এবং মুয়াজ্জিন এর ভিন্ন ব্যবস্থা থাকার কাজটি এজন্যই উত্তম যে, তাহলে প্রত্যেকেই স্বাধীনভাবে এবং সুন্দরভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারেন। অনেকক্ষেত্রে দেখা যায় যে একজনকে যদি সকল দায়িত্ব দেয়া হয়ে থাকে তাহলে তার জন্য এটি লোড বা কষ্টকর হয়ে যায় এবং এর ফলে সে দায়িত্বগুলো সঠিকভাবে পালন করতে ব্যর্থ হয়ে যায়। এজন্যই মূলত আলাদাভাবে ইমাম এবং মুয়াজ্জিন নিয়োগ দেয়ার বিষয়টি মসজিদ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি দেয়া উচিত। ইমাম এবং আযানের দায়িত্বটি একটি গুরু দায়িত্ব যার সাথে আমানতের সম্পর্ক রয়েছে এবং এর সাথে মুসলমানদের মৌলিক অনেক বিষয়ের সম্পর্ক রয়েছে। তাই এসব ক্ষেত্রে আমাদের সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা আমাদের তৌফিক দান করুন। আমীন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *